অতীতে ‘ইলিশের বাড়ি’ ছিল পদ্মা-মেঘনা-ডাকাতিয়ার মোহনা বাংলাদেশের চাঁদপুরে। এখন বাংলাদেশের ভোলা-বরগুনার নদী-সাগর মোহনা থেকে শুরু করে বৃহত্তর সিলেটের বিস্তীর্ণ হাওরে পর্যন্ত মিলছে ‘জলের উজ্জ্বল শস্য’ ইলিশ। প্রতিবছর বরগুনায় হচ্ছে ইলিশ উৎসব। উপকূলভাগের পুকুরে ‘মাছের রাজা’ ইলিশের চাষ প্রায় সাফল্যের দ্বারপ্রান্তে। সাগরের নোনা জল থেকে স্বাদু জলেও এসে ডেরা বাঁধছে ইলিশ।
ইলিশের জীবনসূত্র আবিষ্কার করেছেন বাংলাদেশের বিজ্ঞানীরা। ঢালচর, মনপুরা, মৌলভীর চর ও কালির চর দ্বীপে সমন্বিতভাবে প্রায় ৭ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকায় এখন ইলিশের রাজ্য।
একাধিক প্রতিষ্ঠানের এক যৌথ গবেষণায় দেখা যাচ্ছে, সমুদ্র্র থেকে ডিম পাড়তে মিঠা পানির নদীতে ঢুকে বহু ইলিশই আর কখনো সাগরে ফিরে যাচ্ছে না। মোহনায় পাতা মাছধরা জালের ভয়েই ইলিশের ঝাঁক মিষ্টি পানিতে রয়ে যাচ্ছে বলে তারা ধারণা করছেন। আসলে সাগরে না-ফেরাটা এই ইলিশগুলোর এক ধরনের বেঁচে থাকার চেষ্টা বা ‘ন্যাচারাল সিলেকশন’ বলেই মনে করছেন গবেষকরা। ইলিশ সাগরের মাছ হলেও ডিম পাড়তে ঝাঁকে ঝাঁকে তারা নদীতে ঢোকে—আবহমান কাল থেকে ইলিশ-প্রিয় বাঙালি সেটাই জেনে এসেছে।
বাংলাদেশ বিশ্বের মোট ইলিশ উৎপাদনের ৮০ শতাংশ আহরণ করে। দুই বছর আগেও এই পরিমাণ ছিল মোটে ৬০ শতাংশ। চলতি বছর উত্পাদনে অতীতের সব রেকর্ড ভেঙেছে বাংলাদেশ। ১০ বছর আগে ২০০৮-৯ অর্থবছরে বাংলাদেশে ইলিশ উত্পাদিত হয়েছিল ২ লাখ ৯৮ হাজার মেট্রিক টন। বর্তমান বছরে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ৭ লাখ মেট্রিক টন।
শুধু মৌসুম জুড়েই নয়, রূপালি ইলিশের প্রাচুর্য সারা বছরই রসনাবিলাসীদের পাতে থাকবে আগামীতে। সেই লক্ষ্যের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছেছে বাংলাদেশ। বিশ্বের ১১ দেশে ইলিশ উত্পাদন হলেও স্বাদে-গন্ধে রসনাতৃপ্ত ইলিশের প্রাচুর্য কেবল বাংলাদেশেই মেলে। এবার ইলিশের মৌসুমে যুক্ত ছিল শীতকাল। গত ১ মার্চ নিষেধাজ্ঞা আরোপের পূর্বাবধি বাজার ছিল ইলিশে সয়লাব। এখনো বিভিন্ন বাজারগুলোতে মিলছে ইলিশ মাছ।
ইলিশ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রজনন মৌসুমে ইলিশ ধরায় নিষেধাজ্ঞা এবং জাটকা নিধন বন্ধে নেওয়া পদক্ষেপ কার্যকর হওয়ায় ইলিশ উত্পাদন বেড়েছে। এ ধারা অব্যাহত থাকলে আগামী শীত মৌসুমসহ সব সময়ে এভাবে ইলিশ পাওয়া যাবে।