বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার গুলশানে হলি আর্টিজান বেকারিতে হামলায় জড়িত অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে প্রত্যাশিত রায় হবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) সিটিটিসি’র প্রধান মনিরুল ইসলাম। সোমবার ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এই আশা প্রকাশ করেন। বুধবার হলি আর্টিজান হামলা মামলার রায়কে ঘিরে নাশকতা ঠেকাতে পুলিশের ইন্টেলিজেন্স নেটওয়ার্ক অব্যাহত রয়েছে।
ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) সিটিটিসি’র প্রধান মনিরুল ইসলাম বলেন, আমি এর আগেও বলেছি, হলি আর্টিজান হামলা মামলার তদন্ত জটিল ছিল। কারণ, যারা হামলায় সরাসরি অংশ নিয়েছিল, তাদের পাঁচ জন মারা যায়। অনেকে গ্রেফতারের সময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে মারা যায়। যারা এই হামলার মাস্টার মাইন্ড ছিল, সেই তামিম চৌধুরী, মেজর (বরখাস্ত) জাহিদ, মারজানসহ অনেকেই বিভিন্ন অভিযানে মারা গেছে। তারপরও যারা গ্রেফতার হয়েছে, তাদের কাছ থেকে প্রাপ্ত তথ্য এবং ঘটনাস্থলের কিছু আলামতগুলো বিশ্লেষণ করে সামগ্রিকভাবে একটি নিখুঁত ও বস্তুনিষ্ঠ অভিযোগপত্র দাখিলের চেষ্টা করেছি এবং আমরা সেটা করেছি।
তিনি বলেন, আপনারা জানেন, মামলার বিচার কাজ শেষ পর্যায়ে, এখন কেবল রায় ঘোষণা করার বাকি। আমরা মনে করছি, যার যে ভূমিকা ছিল, অর্থাৎ হলি আর্টিজান হামলার পরিকল্পনায়, পরিকল্পনা বাস্তবায়নে যার যে পর্যায়ে ভূমিকা ছিল, তা চার্জশিটে উল্লেখ করেছি। সাক্ষ্য প্রমাণের মাধ্যমে বিজ্ঞ আদালতে অভিযোগ প্রমাণ করতে পেরেছি। তাই আশা করছি, যার যে দায় ছিল সেই অনুযায়ী প্রত্যাশিত রায় হবে।
হলি আর্টিজান হামলা ছাড়াও আরও যেসব জঙ্গি হামলা হয়েছে, সেসব ঘটনায় দায়ের করা মামলার অধিকাংশের অভিযোগপত্র দেওয়া হয়েছে উল্লেখ করে মনিরুল ইসলাম বলেন, অধিকাংশের অভিযোগপত্র দেওয়া হয়েছে। কিছু মামলার অভিযোগপত্র অনুমোদনের অপেক্ষায় আছে। এই মুহূর্তে আমি বলতে পারি, আমরা পান্থপথের জঙ্গি হামলার অভিযোগপত্র দিয়েছি। এভাবে প্রায় সব মামলার তদন্ত শেষ করে বিভিন্ন দফতরে অনুমোদনের জন্য জমা দিয়েছি। আমরা আশা করি, এসব মামলার বিচার কাজ হলি আর্টিজান হামলার মামলার মতো দ্রুত শেষ হবে।
আগামি বুধবার হলি আর্টিজান হামলা মামলার রায়কে ঘিরে কোনও জঙ্গি হামলার আশঙ্কা আছে কিনা, সাংবাদিকের এ প্রশ্নে মনিরুল ইসলাম বলেন, গুলশানের ভাটারা এলাকা থেকে যারা গ্রেফতার হয়েছে তারা পুরনো জেএমবি। আর যারা হলি আর্টিজান হামলায় অংশ নিয়েছিল এবং পরিকল্পনায় ছিল তারা সবাই নব্য জেএমবির। তবে গ্রেফতার আবু রায়হানের সঙ্গে অনেকের যোগাযোগ ছিল। মামলার রায়কে কেন্দ্র করে এই গ্রুপটির কোনও নাশকতার পরিকল্পনা ছিল কিনা, সে বিষয়ে আমরা তাদের কাছ থেকে এখনও কোনও বক্তব্য পাইনি। আমরা জানতে পারিনি, তবে তাদের আরও জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।
তিনি বলেন, হলি আর্টিজান হামলায় নব্য জেএমবির যারা সরাসরি অংশ নিয়েছিল, যারা ঘটনাটি ঘটিয়েছিল, তাদের পাঁচজন ঘটনাস্থলেই মারা যায়। পাশাপাশি তাদের যারা নেতা এবং মূল পরিকল্পনাকারী, তাদের বেশ কয়েকজন অর্থাৎ আটজন বিভিন্ন সময় পুলিশের অভিযানে নিহত হয়েছে, কেউ আত্মহত্যা করেছে। মামলায় আটজন আসামি রয়েছে। তাদের কেন্দ্র করে অর্থাৎ এই রায়কে কেন্দ্র করে বা তাদের ছাড়িয়ে নিতে কিংবা অন্য কোনও নাশকতা কর্মকাণ্ড যাতে না করতে পারে, সেজন্য আমাদের ইন্টেলিজেন্স নেটওয়ার্ক অব্যাহত রেখেছি। জঙ্গিদের যে সেল রয়েছে তারা এবং সাইবার জগতে এরা অ্যাকটিভ রয়েছে। পুলিশের ওপর হামলার ঘটনায় নব্য জেএমবির পাঁচজনের সেলের তিনজন গ্রেফতার হলেও দু’জন এখনও গ্রেফতার হয়নি। তাদের কর্মকাণ্ড আমরা নজরদারিতে রেখেছি। পাশাপাশি তাদের আইনের আওতায় আনার চেষ্টা করছি।
আরো বলেন, পুলিশের ওপর হামলাকারী নব্য জেএমবির সেলটি বোমা তৈরি করতে জানে। তারা অভিজ্ঞ। তারা পাঁচটি ঘটনা ঘটিয়েছে। তাদের দু’জনকে গ্রেফতারের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি যাতে তারা কোনও নাশকতা চালাতে না পারে। তাদের ছবি ও তথ্য আমাদের কাছে রয়েছে।
প্রসঙ্গত, ২০১৬ সালের ১ জুলাই রাতে গুলশানের হলি আর্টিজান রেস্তোরাঁয় হামলা চালিয়ে বিদেশি নাগরিকসহ ২০ জনকে হত্যা করে জঙ্গিরা। এ সময় জঙ্গিদের গ্রেনেড হামলায় দুই পুলিশ সদস্য নিহত হন। পরে অভিযানে পাঁচ জঙ্গি নিহত হয়। ওই ঘটনায় সন্ত্রাসবিরোধী আইনে গুলশান থানায় মামলা করে পুলিশ। আগামী ২৭ নভেম্বর এ মামলার রায় ঘোষণা করা হবে।