বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনায় নানা আয়োজনে পালিত হচ্ছে খ্রিস্ট ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব বড়দিন। খ্রিস্ট ধর্মাবলম্বীরা বিশ্বাস করেন, সৃষ্টিকর্তার মহিমা প্রচার এবং মানবজাতিকে সত্য ও ন্যায়ের পথে পরিচালিত করতে যিশুর এ ধরায় আগমন ঘটেছিল। বাংলাদেশের খ্রিস্ট ধর্মানুসারীরা যথাযথ ধর্মীয় আচার, আনন্দ উৎসব ও প্রার্থনার মধ্য দিয়ে দিনটি উদযাপন করছেন।
এ উপলক্ষে গির্জাগুলো ফুল, রঙ্গিন কাগজ আর আলোয় আলোয় সাজানো হয়েছে মনোরম সাজে। ক্রিসমাস ট্রি থেকে ঝুলছে আলোর মালা। বানানো হয়েছে খ্রিস্টের জন্মের ঘটনার প্রতীক গোশালা। সেই সঙ্গে বড়দিনের কেক। আজ বুধবার বড়দিন হলেও আগের রাত মঙ্গলবার থেকেই উৎসবে মেতে উঠেন খ্রিস্টানরা, তাদের বাড়ি বাড়ি চলে উৎসব। খ্রীস্টধর্ম অনুযায়ি, এই দিনে খ্রিস্টধর্মের প্রবর্তক যিশুখ্রিস্ট বেথলহেমে জন্মগ্রহণ করেছিলেন।
এ উপলক্ষে ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয় ঢাকাসহ সারা বাংলাদেশে। প্রতিটি চার্চে সাদাপোশাকের পর্যাপ্তসংখ্যক পুলিশ সদস্য নিয়োজিত রয়েছে। প্রতিটি চার্চে আর্চওয়ে দিয়ে দর্শনার্থীকে ঢুকতে হচ্ছে। মেটাল ডিটেক্টর দিয়ে ও ম্যানুয়াল তল্লাশি করা হচ্ছে। অনুষ্ঠানস্থল ডগ স্কোয়াড দিয়ে সুইপিং করা হচ্ছে। নিরাপত্তায় থাকবে ফায়ার সার্ভিস ও অ্যাম্বুলেন্সের ব্যবস্থা। থাকবে চার্চ এলাকায় নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎব্যবস্থা। চার্চ এলাকায় কোনো ভাসমান দোকান বা হকার বসতে দেওয়া হবে না। কোনো প্রকার ব্যাগ, ট্রলিব্যাগ ও ব্যাগপ্যাক নিয়ে চার্চে আসতে দেয়া হচ্ছে না।
বড়দিন উপলক্ষে সরকারি ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। পৃথক পৃথকভাবে শুভেচ্ছা জানিয়ে বাণী দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
আজ ২৫ ডিসেম্বর বিভিন্ন চার্চে প্রার্থনায় শান্তি ও মঙ্গল কামনা করার পাশাপাশি বড়দিনে উৎসবের আনন্দেও মেতে উঠেছেন খ্রিস্ট ধর্মাবলম্বীরা। ঢাকার কাকরাইলে আলোকসজ্জাসহ একটি ক্রিসমাস ট্রি স্থাপন করা হয়েছে। সকালে কাকরাইলের সেন্ট মেরিস ক্যাথেড্রালে বড়দিনের প্রার্থনায় অংশ নেয় খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বী হাজারও নারী-পুরুষ ও শিশু। তেজগাঁওয়ের হোলি রোজারিও চার্চে প্রার্থনা সভা অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে কয়েক হাজার নানা বয়সী মানুষ মিলিত হন।
বড়দিনের উৎসবকে ঘিরে বর্ণিল করে সাজানো হয় চার্চ এলাকা, ক্রিসমাস ট্রি আর আলোকসজ্জা ছিল নজরকাড়া। চার্চ প্রাঙ্গণে ঢুকতেই প্রার্থনাকারীদের চোখে পড়ে যিশু কোলে মা মেরির বড় আকারের ভাস্কর্য, যার চরণে প্রণাম জানিয়ে পূজারীরা প্রবেশ করেন ভেতরে।
দক্ষিণ এশিয়ায় দায়িত্বরত কার্ডিনাল প্যাট্রিক ডি’রোজারিও, কাকরাই চার্চ এর পাল-পুরোহিত ফাদার বিমল ফ্রান্সিস গোমেজ, ডিপ্লোমেটিক কোরের ডিন আর্চবিশপ জর্জ কোচেরি, বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত ও মিশনের প্রতিনিধি, খ্রিস্টান সমপ্রদায়ের গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ, ধর্মীয় নেতৃবৃন্দ এবং বিভিন্ন পেশার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে শিল্পীরা সমবেত কণ্ঠে ক্রিসমাস ক্যারোল পরিবেশন করেন।