বাংলাদেশে কর্মক্ষেত্র থেকে শুরু করে সংসারের হাল ধরা, সন্তান প্রতিপালন করা প্রতিটি বিষয়ে একবিংশ শতাব্দীতেও কোনপ্রকার লিঙ্গ বৈষম্যের অবসান হয়নি।
উঠে এসেছে ফের নারী-পুরুষ বৈষম্যের বিষয়টি। খাগড়াছড়ির দীঘিনালায় পুরুষের সমান সমস্ত কাজ করেও নারীরা যে মজুরি পাচ্ছেন, তা পুরুষের অর্ধেক!
যেমন পুরুষদের যদি দেয়া হয় ৬০০ টাকা সে স্থানে সমান পরিশ্রমে হাত-পা চালিয়ে মাথার ঘাম পায়ে ফেলে মহিলারা পাচ্ছেন মাত্র ৩০০ টাকা!
উপজেলায় পাঁচটি ইউনিয়নে প্রায় কয়েকশ নারী শ্রমিক রয়েছে। যারা সকাল সকাল ঘরের যাবতীয় কাজ করে, সন্তান সামলে ফের মাঠে এসে এক হাঁটু কাদায় নেমে বপন করছে ধান।
এমতাবস্থায় একজন পুরুষ যিনি সকাল সকাল মাঠে চলে আসছেন, এবং মহিলাটির মতোই মাঠে নেমে ধানের চারা লাগাচ্ছেন, পুরুষটির পরিশ্রম এবং মহিলাটির পরিশ্রমে কোন অংশে পার্থক্য রয়েছে কী?
দু-পক্ষ সমানে শরীর খাটিয়ে সমান মজুরি পাবার যোগ্য। উল্টে আমরা যদি বলি, মহিলাদেরই বেশি কাজ করতে হচ্ছে।
কর্মক্ষেত্রে নারী-পুরুষের এমন বৈষ্যম্যের কথা বাংলাদেশ সরকারকে বহুবার জানানো হয়েছে। কিন্তু সরকারপক্ষ থেকে নারী-পুরুষের সমতা আনয়নের জন্যে কোন প্রকার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে না।
দীঘিনালা উপজেলা পরিষদের নারী ভাইস চেয়ারম্যান সীমা দেওয়ান জানিয়েছেন, দ্রুত এই বৈষম্যের অবসান প্রয়োজন। যদিও হাসিনা সরকার এ বিষয়ে গা করছেন না।
উল্লেখযোগ্য, সাবানা (নাম পাল্টে) জানিয়েছেন, ‘দেশে নারী-পুরুষের সমতা এখনো ফিরে আসেনি। এক তসলিমা নাসরিন নারী-পুরুষের সমতা নিয়ে, মানবতাবাদ নিয়ে যুদ্ধ করে আজ দেশের বাইরে। দেশ থেকে নাসরিন নির্বাসিত ২৫ বছর হয়ে গেছে। বলা যায়, বিরাট একটা অধ্যায়। যুদ্ধের পরও বাংলাদেশে নারী-পুরুষের সমতার কোন লক্ষণ নেই।’
তিনি এমনও বলেছেন, ‘বর্তমান সময়ও দেশের মেয়েরা মানসিকভাবে প্রস্তুত না থাকলেও তাঁদের জোর করা হচ্ছে সন্তান নেবার জন্যে। অথচ ‘মা’ হবার জন্যে যে প্রস্তুতি প্রয়োজন, সে প্রস্তুতির সময়ও তাঁদের দেয়া হচ্ছে না। সন্তান নেয়া না নেয়া সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত বিষয়, সেখানে কেন এমন স্বামীর বাড়ি থেকে জোর করা হবে?’
নারী-পুরুষের এমন সাংঘাতিক বৈষ্যম্যের কথা বলতে বলতে রীতিমতো কেঁদে ফেলল অন্য একটি মেয়েটি। যে মেয়েটি ইন্টারভিউ বোর্ডে পুরুষের মতোই সমান যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও চাকুরিটা পেল না। একমাত্র কারণ, সে মেয়ে। কখনো রাত হয়ে গেলে অফিস থেকে বেরোতে দেরি হলে রাস্তায় নানা রকম হামলার মুখে পড়তে পারে সে। এছাড়া, তার ভবিষ্যতে বিয়ে হবে, সন্তান-সন্ততি হবে। সুতরাং তার পক্ষে কোনভাবেই সম্ভব নয়, এই চাকুরি করা!’
সুতরাং যোগ্যতা হার মানল, জয়ী হল পুরুষটি। দিনের পর দিন এভাবে বৈষম্যের শিকার হয়ে প্রাণোচ্ছ্বল মেয়েরা হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়ছে ।
নারী অধিকারকর্মীরা বলছেন, সব রকম বৈষম্যের মূলে আছে পরিবার এবং সমাজে নারীর অধস্তন অবস্থান এবং সেটার সমর্থক দৃষ্টিভঙ্গি।
মহিলা পরিষদের সভাপতি আয়শা খানম যেমনটা মনে করেন, “সহিংসতা নারীদের কষ্টার্জিত অর্জনগুলো নষ্ট করে দিচ্ছে। তিনি বলেন, ‘সামাজিক অগ্রগতি বজায় রাখতে হলে সহিংসতা বন্ধ করতেই হবে। আর এ জন্য চাই সমতাভিত্তিক সমাজ। আর তার জন্য দরকার উদার আইন এবং এর প্রয়োগ।”