ঢাকা: একে তো বিশ্বকাপের ফাইনাল খেলা। তারপর ছিল প্রিয়দল আর্জেন্টিনার ওয়াল্ড কাপ জয়। জয়ের আনন্দে উন্মদনায় ভেসে যায় গোটা Bangladesh।
এই জয়ের উৎসব পালন করতে গিয়ে চারজন প্রাণও হারিয়েছেন। জখম বহু। গোটা বাংলাদেশই উন্মদনায় ভরপুর ছিল রবিবার রাতটি। শুধু আনন্দ মিছিলই নয়-ভুরিভোজের ব্যবস্থা ছিল দেশের নানা প্রান্তে। তৃতীয় বারের মতো বিশ্বকাপ জিতেছে Messiর আর্জেন্টিনা।
ফ্রান্সের বিপক্ষে বিশ্বকাপের ফাইনালে জয়ের মাধ্যমে ১৯৮৬ সালের পর প্রথমবারের মতো বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন খেতাব পেল লাতিন আমেরিকার এই দেশটি। রাতকে উপেক্ষা করে জনসমুদ্রে পরিণত হয় রাজধানী ঢাকা।
বুয়েন্স আইরেসের পথঘাট সব।এক বাংলাদেশি বলেন, ‘আমি আমার আবেগ ধরে রাখতে পারছি না। মেসিদের এমন জয়ে আমি খুবই গর্বিত। আর্জেন্টিনার জয়ে আকাশে বাতাসে ভেসে বেড়ানো উত্তেজনার সুবাস ছড়িয়ে পড়েছে বাংলাদেশের মানুষের মনে।
দেশজুড়ে আনন্দ, উল্লাস ও উদযাপন ছড়িয়ে পড়ে। এই বিশ্বকাপ ফাইনাল খেলা দেখতে গিয়ে দেশের দক্ষিণের জেলা যশোরে প্রাণ গেল এক তরুণের।
যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলায় রাকিব হোসেন (২৪) নামের এক তরুণ নিহত হয়েছেন। রোববার রাতে ফাইনাল খেলা দেখার সময় উপজেলার কাটাখাল এলাকায় নিমার্ণাধীন সেতুর পাইলিং করা গর্তে পড়ে তাঁর মৃত্যু হয়।
কাটাখাল এলাকার একটি পার্কে বড় পর্দায় Argentina বনাম ফ্রান্সের খেলা দেখানোর আয়োজন করা হয়। রাকিব সেখানে খেলা দেখতে যান। উল্লাস করতে গিয়ে হঠাৎ পা পিছলে রাকিব ওই পার্ক লাগোয়া একটি খালে পড়ে যান।
এতে খালের ওপর নির্মাণাধীন সেতুর পাইলিং করা গর্তের ভেতরে থাকা রড রাকিবের পেটে ঢুকে যায়। এদিকে Argentina জেতার পর আনন্দ মিছিল করার সময় মোটরসাইকেলের ধাক্কায় শাওন (১০) নামে এক শিশু নিহত হয়েছে।
কুষ্টিয়ার হরিপুরে ফুটবল বিশ্বকাপের ফাইনাল খেলা নিয়ে সংঘর্ষে আর্জেন্টিনা-ব্রাজিলের সাতজন সর্মথক আহত হয়েছেন। আশঙ্কাজনক অবস্থায় আছেন দুই জন।
অপরদিকে পশ্চিমের জেলা চুয়াডাঙ্গায় বিশ্বকাপ জয়ের পর ট্রাকে করে আনন্দ শোভাযাত্রা করার সময় শতাধিক কিশোরকে আটক করেছে পুলিশ। তদের রবিবার গভীর রাতে শহরের মাথাভাঙ্গা ব্রিজ থেকে আটক করা হয়।
অপর জেলা কুষ্টিয়ায় রবিবার দিবাগত রাত একটার দিকে বিশ্বকাপের ফাইনাল খেলায় টাইব্রেকারে আর্জেন্টিনা জেতার পরপরই দু’পক্ষের সংঘর্ষে ২০ জন জখম হয়েছেন। তাদের পাঁচজনকে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
আর্জেন্টিনা জয়ের পর রবিবার রাত সাড়ে ১২টার দিকে কুমিল্লা-নোয়াখালী আঞ্চলিক মহাসড়কে একটি বিজয় মিছিল বের হয়। এ সময় খিলা বাতাবাড়ীয়া এলাকায় নাথেরপেটুয়াগামী একটি মোটরসাইকেল সজোরে ধাক্কা দেয় শিশু শাওনকে।
সড়কে ছিটকে পড়ে ঘটনাস্থলে শাওনের মৃত্যু হয়। অপরদিকে কাতার ফুটবল বিশ্বকাপ ফাইনাল খেলা দেখার জন্য মোটরবাইকে চেপে বাড়ি যাবার সময় ট্রাক চাপায় দুই আর্জেন্টিনা সাপোর্টার নিহত হন।
এ কাণ্ডে মারাত্মক আহত অপরজন হাসপাতালে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছেন। নিহত হন-আরিফুল ইসলাম (১৭) ও ইরফান (১৫)।আহত হন জীবন চন্দ্র দাস (১৮)।
এদিকে বিশ্বকাপ ফুটবল ফাইনাল খেলায় আর্জেন্টিনা বিজয়ী হওয়ায় ফেনী পৌরসভার মেয়র নজরুল ইসলাম স্বপন মিয়াজি গরু জবাই করে প্রায় পাঁচ হাজার লোকের ভূরিভোজের আয়োজন করেন।
খাবারের পর আর্জেন্টিনার সমর্থকরা রাতজুড়ে শহরে আনন্দ-উল্লাস করতে থাকে। শহরের বিভিন্ন সড়ককে আর্জেন্টিনার পতাকা দিয়ে সাজানো হয়। নান্দনিক ফুটবলে আর্জেন্টিনার জয়ে উৎসবের নগরীতে রূপ নেয় কুমিল্লা। সেই উৎসবের রং ছড়িয়ে পড়ে লালমাই পাহাড়ের কোলে অবস্থিত কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়েও। রাতভর আনন্দ–উল্লাসে মাতিয়ে রাখেন মেসি–ভক্তরা।
‘মেসি, মেসি’ স্লোগানে প্রকম্পিত হয় রাজপথসহ সবুজে ঘেরা লালমাটির ক্যাম্পাস। কেউ ড্রোন উড়িয়েছেন, কেউ আতশবাজি ফাটিয়েছেন। ছিল ঢাকঢোলের বাদ্য ও ভুভুজেলা। আর্জেন্টিনার পতাকা উড়িয়ে, মোটর শোভাযাত্রা করে অবিস্মরণীয় মুহূর্তকে স্মৃতির পাতায় লিখে রাখেন ফুটবলপ্রেমীরা।