বাংলাদেশের সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলার রাজানগর ইউনিয়নের কেজাউড়া গ্রামে নিজেকে বাঁচাতে এবং প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে শিশু তুহিনকে হত্যা করেছেন বাবা আব্দুল বাছির। তুহিনকে হত্যায় বাবার সঙ্গে অংশ নিয়েছেন কাকা নাছির উদ্দিন ও খুড়তুতো ভাই শাহরিয়ার।
ঘটনার দিন শিশু তুহিনকে ঘুমন্ত অবস্থায় তাঁর বাবা আব্দুল বাছির ঘর থেকে বের করে নিয়ে যান। এরপর তুহিনের বাবা, কাকা ও শাহরিয়ার মিলে হত্যা করেন। এরপর তুহিনের পেটে দুটি ছুরি বিদ্ধ করে গাছে ঝুলিয়ে দেন।
মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৭টায় সুনামগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. মিজানুর রহমান নিজ কার্যালয়ে ‘নর্থ ইস্ট নাও’কে এসব তথ্য জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, মূলত প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে শিশু তুহিন হত্যাকাণ্ড ঘটেছে। এর সঙ্গে আছে পারিবারিক বিরোধ। তুহিন হত্যায় অংশ নেয়া বাবা-কাকা এবং খুড়তুতো ভাই আগে থেকেই হত্যা মামলার আসামি।
তুহিনের বাবা একটি হত্যা মামলার পাশাপাশি আরও দুটি মামলার আসামি।
এ এলাকায় আরও দুটি খুনের ঘটনা ঘটে। ওসব মামলার আসামি তুহিনের বাবা-কাকা এবং খুড়তুতো ভাইসহ অন্যরা।
তবে তুহিন হত্যায় জড়িত মূলত তিনজন। তাঁরা হলেন বাবা আব্দুল বাছির, চাচা নাছির উদ্দিন ও ভাই শাহরিয়ার। মূলত প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতেই তুহিন হত্যাকাণ্ড ঘটেছে।
তবে স্থানীয়রা বলছেন, পারিবারিক বিরোধ ও হত্যা মামলা থেকে নিজেকে বাঁচাতে সন্তান তুহিনকে বলি দিয়েছেন বাবা আব্দুল বাছির। আগে থেকেই আব্দুল বাছির প্রতিপক্ষের করা হত্যা মামলার আসামি। ওই মামলা থেকে নিজেকে বাঁচাতে এমন ঘটনা ঘটিয়েছেন তুহিনের বাবা।
এ ব্যাপারে তুহিন হত্যা মামলার তদন্ত কর্মকর্তা দিরাই থানা পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) আবু তাহের মোল্লা বলেন, তিনজন আসামির পাঁচদিনের রিমান্ড চাইলে তিনদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত। রিমান্ডে তাদের কাছ থেকে আরও অনেক তথ্য পাওয়া যাবে।
সোমবার রাতে এ ঘটনায় তুহিনের মা মনিরা বেগম অজ্ঞাত ১০-১২ জনের বিরুদ্ধে দিরাই থানায় একটি হত্যা মামলা করেন। এ মামলায় এ পর্যন্ত পাঁচজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
গ্রেফতারের আগে তুহিনের বাবা আব্দুল বাছির সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন, তার তিন ছেলে ও এক মেয়ে। এর মধ্যে তুহিন দ্বিতীয়। গত ১৫ দিন আগে তাঁর এক কন্যাসন্তানের জন্ম হয়।
রোববার রাতে খেয়ে-দেয়ে সন্তানদের নিয়ে ঘুমিয়ে পড়েন তাঁরা। রাত আড়াইটার দিকে তাঁর এক ভাইঝি ঘুম থেকে ডেকে তুলে বলে তাঁদের ঘরের দরজা খোলা। এরপর সবাই জেগে ওঠে দেখেন তুহিন নেই। তখন প্রতিবেশীদেরও ডেকে তোলা হয়। একপর্যায়ে বাড়ির পাশে রাস্তায় একটি কদম গাছের ডালে তুহিনের ঝুলন্ত মরদেহ দেখতে পান।
এ ব্যাপারে রাজানগর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সৌম চৌধুরী বলেন, এমন নৃশংস হত্যাকাণ্ড দিরাই উপজেলার মানুষ এর আগে দেখেনি। আমরা এই হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের সর্বোচ্চ শাস্তি চাই, ঘটনাটি তদন্ত করে হত্যাকারীদের দ্রুত গ্রেফতার করা হোক।