বৃহস্পতিবার মোট ৩ হাজার ৫৪০ জন রোহিঙ্গাকে স্বদেশে ফেরার সমস্ত প্রস্তুতি গ্রহণ করেও তাঁদের ফেরা হল না। কার্যত এবার দ্বিতীয়বারের মতো ভেস্তে গেল রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন।
২২ আগস্ট সকাল ৯ টা থেকে বিকেল ৫ টা পর্যন্ত অপেক্ষার পরও কোন রোহিঙ্গা স্বেচ্ছায় মিয়ানমারে ফিরে যেতে ট্রানজিট ক্যাম্পে এসে উপস্থিত হয়নি।
বাংলাদেশের শিবিরে আশ্রয়রত রোহিঙ্গাদের মধ্যে একজনও বিনাশর্তে মায়ানমারে যেতে রাজি হয়নি।
মূলত নাগরিকত্ব, নিরাপত্তা, বসতভিটাসহ সম্পদ ফেরত ও নিপীড়নের বিচার নিশ্চিত না হলে মিয়ানমার ফিরতে নারাজ রোহিঙ্গারা।
এর আগে একই কারণে গত বছর ১৫ নভেম্বর সব প্রস্তুতি সম্পন্নের পরও রোহিঙ্গারা মিয়ানমারে ফিরে যেতে অস্বীকৃতি জানানোয় প্রত্যাবাসনের প্রথম উদ্যোগ ভেস্তে যায়।
মায়ানমারের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে কোন বার্তা জানানো হয়নি। যদিও বাংলাদেশের কর্মকর্তারা নিজ দেশে ফিরে যাবার জন্যে রোহিঙ্গাদের সাক্ষাৎকার ও প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখবেন বলে জানিয়েছেন।
উল্লেখ্য, প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া শুরু করার জন্যে গতকাল বাংলাদেশের পক্ষ থেকে সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়। রোহিঙ্গাদের মায়ানমারে নিয়ে যাবার জন্যে তৈরি ছিল ৫টি বাস ও ৩টি ট্রাক, তৈরি ছিল মেডিক্যাল টিমও। প্রত্যাবাসন সংশ্লিষ্ট সব কর্মকর্তা, মিয়ানমার ও মধ্যস্থতাকারী দেশ চীন দূতাবাসের প্রতিনিধিরাও ছিলেন উপস্থিত ছিলেন। কিন্তু শেষ মুহূর্তে অতি প্রত্যাশার কাজটি দ্বিতীয়বারের জন্যে ফের আটকে গেল!
সাবেক রাষ্ট্রদূত ও কূটনৈতিক বিশ্লেষক এম. হুমায়ুন কবির মনে করেন, রাখাইনের পরিবেশ রোহিঙ্গাদের মনে তীব্র ক্ষোভ এবং আশংকার সৃষ্টি করেছে। যে নির্যাতন পেয়ে তারা বাংলাদেশ সরকারের আশ্রয় গ্রহণ করেছে, সেই পূর্বের বিশ্বাস তারা ফিরে পাচ্ছে না মায়ানমার সরকার থেকে। ফলে বারবার ব্যর্থ হয়ে যাচ্ছে প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া। কিন্তু এতে জটিলতা আরো বৃদ্ধি পাবে একথাও জানান তিনি।
তবে বাংলাদেশও জানিয়ে দিয়েছে, যতক্ষণ না স্বইচ্ছায় রোহিঙ্গারা প্রস্তুত হচ্ছে সে দেশে যেতে, জোরপূর্বকভাবে তাদের পাঠানো হবে না।
২০১৭ সালের ২৫ আগস্টের পর থেকে মায়ানমারের রাখাইন রাজ্যের গ্রামে গ্রামে সংখ্যালঘু রোহিঙ্গাদের ওপর গণহত্যা-ধর্ষণ-নির্যাতন চালায় দেশটির সেনাবাহিনী। প্রাণ বাঁচাতে ৭ লক্ষেরও অধিক রোহিঙ্গা সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশের উপকূলে এসে আশ্রয় নেয়। বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে, বর্তমান সময়ও মায়ানমারের সেনারা সংখ্যালঘুদের ওপর যৌন নির্যাতন অব্যাহত রেখেছে।
এর ফলে দক্ষিণ এশিয়া তথা বিশ্বের সবচেয়ে বড় শরণার্থী সংকট সৃষ্টি হয়। এ নিয়ে বহু আন্তর্জাতিক প্রচেষ্টার পর সম্প্রতি মায়ানমার যাচাই-বাছাই করা ৩ হাজার ৫৪০ জন রোহিঙ্গাকে প্রথম দফায় ফিরিয়ে নিতে রাজি হয়।