বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গারা ক্রমশ বাংলাদেশের ত্রাস হয়ে উঠেছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, দ্রুত প্রত্যাবাসন করা না গেলে বাংলাদেশের নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা ব্যাহত হতে পারে।
বাংলাদেশের নির্বাসিত লেখিকা তসলিমা নাসরিন রোহিঙ্গাদের সম্বন্ধে লিখতে গিয়ে এক উদার মানসিকতার পরিচয় দিয়েছেন। আসলে যে কোন দেশে যারাই অসামাজিক কাজকর্ম,খুন,ডাকাতি, ধর্ষণে জড়িত তারা প্রত্যেকেই এক-একজন রোহিঙ্গা। কারণ রোহিঙ্গাদের অধিকাংশই এখন এ সমস্ত কার্যের সঙ্গে জড়িত।
দুষ্ট, সমাজবিরোধী কাজে জড়িত, মেয়েদের জীবন ধ্বংস করে দেয়া রোহিঙ্গাদের চরিত্রেরই এমন বহু মানুষ বাংলাদেশে রয়েছে। তাঁদের সঙ্গে চরিত্রগত দিক দিয়ে রোহিঙ্গাদের কোন পার্থক্য নেই। বললেন লেখিকা তসলিমা।
শুধু তাই নয়, তসলিমা আরো লিখেছেন, বাংলাদেশকে আরো উদার হতে হবে। কারণ জার্মানী যখন ১১ লক্ষ অশিক্ষিত আরব মুসলমানদের আশ্রয় দিয়েছে, বাংলাদেশের লোকেরা সে সময় যথেষ্ট আনন্দ লাভ করেছিল।
এবার ১৫ কোটির দেশে ১১ লক্ষ রোহিঙ্গা যখন বাংলাদেশে আশ্রয় নিতে চাইছে, তখন বাংলাদেশ কেন জার্মানীর মতো উদারতা দেখাতে পারছে না?
“অন্যে উদার হলে ঠিক আছে, নিজের উদার হওয়ার দরকার নেই?” বলা বাহুল্য, সত্য সবসময় অপ্রিয় শোনায়।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রোহিঙ্গাদের থাকা-খাওয়া প্রসঙ্গে বলেছিলেন, “মায়ানমারের ১১ লক্ষেরও বেশি নাগরিকের জন্য অনির্দিষ্টকাল ধরে খাদ্য, পোশাক ও বাসস্থানের ব্যবস্থা করা আমাদের জন্য খুব কঠিন ব্যাপার।”
লেখিকা তসলিমা নাসরিন লিখেছেন,
“রোহিংগ্যাদের ভাষা শুনে চেহারা দেখে কাপড় চোপড় দেখে তো মনে হয় তারা যত না বার্মার লোক, তার চেয়ে বেশি বাংলাদেশের লোক। ১১ লক্ষ অশিক্ষিত লোক, তার মধ্যে অনেকেই বর্বর, চোর, ডাকাত, চোরাকারবারি, খুনী, ধর্ষক, ধর্মান্ধ, সন্ত্রাসী। বাংলাদেশে এমন লোকের কি আদৌ অভাব? বাংলাদেশের লোকদের চরিত্র কি রোহিংগ্যাদের চরিত্র থেকে খুব আলাদা?বাংলাদেশে যদি বাস করতে চায় এরা, করুক। মূলস্রোতে মিশে যাক। ১৫ কোটি মানুষের দেশে ১১ লক্ষ এমন কোনও বড় সংখ্যা নয়।। পৃথিবীতে সবারই অধিকার আছে যেখানে খুশি যাওয়ার, যেখানে খুশি বাস করার।
জার্মানী যখন ১১ লক্ষ অশিক্ষিত আরব মুসলমানদের আশ্রয় দিয়েছে, বাংলাদেশের লোকেরা খুশিতে হাত্তালি দেয়নি? দিয়েছে। এখন রোহিংগ্যাদের প্রশ্নে জার্মানীর মতো হতে পারছে না কেন? অন্যে উদার হলে ঠিক আছে, নিজের উদার হওয়ার দরকার নেই?
রোহিংগ্যাদের তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করছো কেন বাপু। তোমরা যখন ইউরোপ আমেরিকায় গিয়ে আশ্রয় ভিক্ষে চাও, তোমরাও তখন এক একটা রোহিংগ্যা। তোমরা যখন আরব দেশে শ্রমিকের কাজ করতে যাও, তোমাদেরও রোহিংগ্যাদের মতো দেখায়।
তোমরা যখন রোহিংগ্যাদের গালি দাও, তোমরা আসলে নিজেদেরই গালি দাও।”
রোহিঙ্গাদের নিয়ে লেখা এই প্রসঙ্গে লেখিকা নাসরিনের উদ্দেশে ভক্তদের প্রশ্নঃ “তাহলে ভারতে তসলিমাও একজন বাংলাদেশি রোহিঙ্গা?”
এর উত্তরে তসলিমা নাসরিন স্পষ্ট ভাষায় জানিয়ে দিলেন, ভারতে তিনি একজন লেখক, মানবাধিকার সংগ্রামী।
“না। আমি ভারতে লেখক, মানবাধিকার সংগ্রামী। আমি উন্নত দেশ সুইডেনের নাগরিক। সুইডেনের কাছে আমি আশ্রয় চাইনি। ওরা আমাকে দেশ থেকে নিয়ে গেছে। নাগরিকত্ব দিয়ে ধন্য হয়েছে। আমি ধনী দেশ থেকে গিয়ে অপেক্ষাকৃত গরিব দেশে বাস করছি। তোমরা সেটা পারবে না।”