ঢাকা: করোনাভাইরাস মহামারীর কারণে গত ২ বছর সীমিত পরিসরে অনুষ্ঠিত দুর্গাপূজা (durga puja) এবার উৎসবের রঙে ফিরছে। সারা বাংলাদেশে (bangladesh)এবার ৩২ হাজার ১৬৮টি মণ্ডপে পূজা (durga puja) উদযাপন হবে বলে বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ জানিয়েছে।
গত বছরের ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে এবার নিরাপত্তা নিশ্চিতে সতর্কতা অবলম্বন করা হচ্ছে বলেও জানিয়েছেন পরিষদের নেতারা। বাঙালি হিন্দুদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব দুর্গাপূজার (durga puja) ঘণ্টা বাজবে রবিবার মহালয়ার মধ্য দিয়ে। ১ অক্টোবর শুরু হবে মূল পূজা যা ৫ অক্টোবর প্রতিমা (durga puja) বিসর্জনের মধ্য দিয়ে শেষ হবে।
এবারের দুর্গোৎসব (durga puja) নিয়ে শনিবার সকালে ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দির মিলনায়তনে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় আসেন হিন্দু ধর্মীয় নেতারা। পরিষদের সভাপতি জে এল ভৌমিক বলেন, গত বছরের ঘটনার প্রেক্ষাপটে এবছর সরকার চাচ্ছে, কোনো অবস্থাতেই যেন কোনো অঘটন না ঘটে।
আইনপ্রয়োগকারী সংস্থা গত বছরের তুলনায় এ বছর অনেক বেশি সক্রিয়। আমরা মনে করি, আমাদের ৩২ হাজারর ১৬৮টি মন্দিরের সুরক্ষা দেওয়া খুব কঠিন। তাই আমরা এবছর প্রত্যেক মন্দিরে স্বেচ্ছাসেবক নিয়োগ করছি, যারা রাতেও পাহারা দেবে।
গত বছর কুমিল্লায় একটি মণ্ডপে প্রতিমার উপর কুরআন রাখার ঘটনায় বিভিন্ন মন্দির ও পূজামণ্ডপে (durga puja) হামলা, ভাংচুর, অগ্নিসংযোগ হয়। তার জেরে আরো কয়েকটি জেলায়ও হামলা হয় হিন্দুদের উপর। জে এল ভৌমিক বলেন, আমরা সম্পূর্ণভাবে নিরাপদ, একথা বলা যাবে না।
ঘটনা ঘটতে পারে, তবে আমরা এবার খুব সচেতন। সর্বোচ্চ সিসিটিভির ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। গ্রামে বিভিন্ন বার্তা পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। বিশেষ করে সেই মন্দিরগুলো বেশি ঝুঁকিপূর্ণ যেগুলো অস্থায়ী মন্দির।
স্থায়ী জায়গায় না হয়ে মাঠে, ময়দানে বা বিভ্ন্নি রাস্তাঘাটে যেসব মণ্ডপ স্থাপন করা হয়, সেগুলো বেশি ঝুঁকিপূর্ণ। সেখানে আমাদের বেশি বেশি পাহারা দিতে হবে এবং সারারাত্র বসে থাকতে হবে।
জে এল ভৌমিক আগামী নির্বাচনের আগেই ধর্মীয় সংখ্যালঘু সুরক্ষায় আইন প্রণয়ন করতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান। তিনি বলেন, বিচারহীনতার সংস্কৃতির কারণেই বার বার ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের উপর হামলা হচ্ছে। ২০১৮ সনের নির্বাচনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ইশতেহারে সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইনের কথা বলা হয়েছে।
আগামী নির্বাচনের আগেই এটা করতে হবে। আমরা বলেছি, এমন একটি আইন করতে হবে, যেমন এসিড নিক্ষেপ হত বাংলাদেশে, সেখানে সর্বোচ্চ শাস্তির বিধান করে স্পেশাল আইন করার ফলে কিন্তু এটা একেবারেই কমে গেছে।
আমাদের জন্যও এমন একটি আইন করতে হবে, যারা অপরাধী তাদের জন্য সর্বোচ্চ শাস্তির বিধান করতে হবে এবং স্পেশাল আদালতে কম সময়ের মধ্যে বিচার করতে হবে।
মতবিনিময় সভায় পূজা (durga puja) উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক চন্দ্রনাথ পোদ্দার জানান, গত বছর সারাদেশে দুর্গাপূজার (durga puja) সংখ্যা ছিল ৩২ হাজার ১১৮টি। এবার এ সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩২ হাজার ১৬৮টি।
ঢাকা মহানগরে পূজার (durga puja) সংখ্যা ২৪১টি, যা গত বছরের থেকে ৬টি বেশি। তিনি বলেন, বর্তমান সরকার রাষ্ট্রীয় দায়িত্বে আসার পর প্রতিবছর ধারাবাহিকভাবে পুজোর সংখ্যা বাড়ছে। দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, ও শুভানুধ্যায়ীদের অনুদান নিঃসন্দেহে পূজার সংখ্যা বৃদ্ধির ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখছে বলা যায়। পূজার সংখ্যা বৃদ্ধি নিশ্চয়ই আনন্দদায়ক।
তবে পুজোর সংখ্যা বৃদ্ধির সাথে সাথে পুজাকেন্দ্রিক নিরাপত্তার বিষয়টিও সবাইকে বিবেচনায় নেওয়া দরকার।
চন্দ্রনাথ পোদ্দার বলেন, পূজা, ঈদ, বড়দিন, বৌদ্ধ পূর্ণিমা প্রত্যেক সম্প্রদায়ের কাছে অত্যন্ত পবিত্র। আমরা এমন একটি সমাজের অপেক্ষায় আছি, যে সমাজে ঈদ-পূজা-বড়দিন-বৌদ্ধ পূর্ণিমাসহ অন্যান্য ধর্মীয় ও সার্বজনীন সামাজিক অনুষ্ঠানগুলো নির্বিঘ্নে, অসাম্প্রদায়িক পরিবেশে, কোনো ধরনের ভয়ভীতি এবং পুলিশি পাহারা ব্যতিরেকে অনুষ্ঠিত হবে।
মতবিনিময় সভায় তিনটি বিষয়ের প্রতি সংশ্লিষ্টদের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়। সেগুলো হলো- দুর্গাপূজা চলাকালীন কোনো ধরনের রাজনৈতিক কর্মসূচি না দেওয়া; দুর্গাপূজাসহ অন্যান্য প্রধান ধর্মীয় অনুষ্ঠানের সময় স্কুল, কলেজ, পাবলিক ও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন বিভাগে পরীক্ষা না রাখা; দুর্গাপূজা সহ অন্যান্য প্রধান ধর্মীয় অনুষ্ঠানের সময় সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ পরীক্ষা না রাখা।
দুর্গাপূজার প্রাক্কালে বিভিন্ন সাংগঠনিক পর্যায়ে বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের সভা এবং কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী পরিষদের সভার মতামতের ভিত্তিতে সভা থেকে দুর্গাপূজায় ২ (দুই) দিনের সরকারি ছুটি ঘোষণা করা, দুর্গাপূজাও জাতীয় মর্যাদায় পালনের পদক্ষেপ নেওয়াসহ বিভিন্ন দাবি উত্থাপন করা হয়।