বাংলাদেশে দুর্নীতির অভিযোগে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) উপাচার্যের অপসারণ, ছাত্রলীগের হামলা এবং শিক্ষার্থীদের হল ছাড়ার নির্দেশের প্রতিবাদে উপাচার্যের বাসভবনের সামনের সড়কে বিক্ষোভ করেছে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। মঙ্গলবার দুপুরে আন্দোলনরত শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা এবং অনির্দিষ্টকালের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণার পর রাস্তায় নেমে আসেন তারা। বিশেষ করে, বিভিন্ন ছাত্রী হল থেকে বিক্ষুব্ধ ছাত্রীরা বের হয়ে বিক্ষোভ মিছিলে যোগ দেন। পরে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে গিয়ে মিলিত হন তারা। মঙ্গলবার রাতেও সেখানে আন্দোলনকারীরা বিভিন্ন প্রতিবাদী স্লোগান দিচ্ছিল। তবে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভের পাশেই উপাচার্যের বাসভবনের ফটক ঘেঁষে পুলিশ, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনপন্থী শিক্ষক এবং শাখা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা অবস্থান করছিল।
জানা গেছে, দুর্নীতির অভিযোগে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) উপাচার্য অধ্যাপক ফারজানা ইসলামের অপসারণ দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালিয়েছে শাখা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। হামলায় ৮ জন শিক্ষকসহ অন্তত ২৫ জন আহত হয়েছে বলে জানা গেছে। মঙ্গলবার বেলা ১২টা থেকে সোয়া ১২টা পর্যন্ত উপাচার্যের বাসভবনের সামনে অবস্থানরত শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের ওপর এ হামলা চালানো হয়।
উপাচার্যের অপসারণ দাবিতে গত সোমবার সন্ধ্যা ৭টা থেকে তার বাসভবন ঘেরাও করে রেখেছিলেন ‘দুর্নীতির বিরুদ্ধে জাহাঙ্গীরনগর’ ব্যানারে আন্দোলনরত শিক্ষক-শিক্ষার্থীর। গতকাল মঙ্গলবার বেলা পৌনে ১২টার দিকে শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মো. জুয়েল রানার নেতৃত্বে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন চত্বর থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে এসে আন্দোলনরতদের ওপর হামলা চালায় ছাত্রলীগ। হামলা চলাকালে উপাচার্যের বাসভবনের নিরাপত্তায় নিয়োজিত পুলিশকে নীরব ভূমিকা পালন করতে দেখা যায়। এছাড়া উপাচার্যপন্থী শিক্ষক-কর্মকর্তাদের ‘ধর ধর’, ‘জবাই কর’ স্লোগান দিয়ে হামলায় উস্কানি দিতে দেখা যায়।
‘দুর্নীতির বিরুদ্ধে জাহাঙ্গীরনগর’ মঞ্চের মুখপাত্র অধ্যাপক রায়হান রাইন বলেন, প্রথমে উপাচার্যপন্থী শিক্ষকদের একটি দল আন্দোলনরতদের ওপর হামলার চেষ্টা চালায়। এতে তারা ব্যর্থ হয়ে ছাত্রলীগ পাঠায়। ছাত্রলীগ এসে ন্যাক্কারজনকভাবে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের হামলা, করে। এতে অনেকেই আহত হয়। আমরা এই হামলার নিন্দা জানাই। বলপ্রয়োগ করে কোনও প্রশাসন টিকে থাকতে পারে না। হামলাবাজ উপাচার্যকে দ্রুত সরিয়ে নিতে সরকারের কাছে দাবি জানাই।
আন্দোলনরত বাংলা বিভাগের শিক্ষক তারেক রেজা জানান, হামলায় আট জন শিক্ষক আহত হয়েছেন। তারা হলেন-নৃবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক সাঈদ ফেরদৌস ও মির্জা তাসলিমা সুলতানা, দর্শন বিভাগের অধ্যাপক আনোয়ারুল্লাহ ভূঁইয়া ও রায়হান রাইন, বাংলা বিভাগের অধ্যাপক শামীমা সুলতানা, ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক খন্দকার হাসান মাহমুদ ও সহকারী অধ্যাপক বিবি হাফছা এবং পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক জামাল উদ্দিন রুনু।
হামলার বিষয়ে জানতে চাইলে শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মো. জুয়েল রানা বলেন, আমরা শিবিরমুক্ত ক্যাম্পাস চাই। আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে শিবির সংশ্লিষ্টতার সুনির্দিষ্ট অভিযোগ ছিল।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর (ভারপ্রাপ্ত) আ.স.ম. ফিরোজ-উল-হাসান বলেন, আমরা চেষ্টা করেও দুই পক্ষের হামলা নিয়ন্ত্রণ করতে পারিনি। বড় ঘটনা এড়াতে আমরা তৎপর আছি।
এর আগে দুপুরে এক জরুরি সিন্ডিকেট সভা শেষে অনির্দিষ্টকালের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা এবং বিকেল সাড়ে ৪টার মধ্যে হল ছাড়ার নির্দেশের কথা জানান ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার রহিমা কানিজ। পরে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন জারি করা এক বিজ্ঞপ্তিতে সাড়ে ৫টার মধ্যে হল ছাড়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। এই নির্দেশের পর হল ছাড়তে শুরু করেছেন শিক্ষার্থীরা। তবে অনেক শিক্ষার্থী নির্দেশ উপেক্ষা করে আন্দোলনে অংশ নিয়েছেন।
‘দুর্নীতির বিরুদ্ধে জাহাঙ্গীরনগর’ মঞ্চের অন্যতম মুখপাত্র নৃবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক সাঈদ ফেরদৌস বলেন, বিভিন্ন হল থেকে সংবাদ আসছে, প্রশাসনের লোকজন জোর করে শিক্ষার্থীদের হল থেকে বের করে দিচ্ছে। কিন্তু হল থেকে শিক্ষার্থীদের জোর করে বের করে এ জমায়েত কমাতে পারবেন না। যত নিপীড়ন চালাবেন এই জমায়েত তত বৃদ্ধি পাবে। তিনি আরও বলেন, আমরা শুনেছি এখানে হামলা চালানোর পরিকল্পনা করা হচ্ছে। আপনারা হামলা করতে পারেন কিন্তু আমি শিক্ষক হিসেবে আমার কোনও শিক্ষার্থীর ওপর হামলা করতে দেবো না।