বাংলাদেশ কী শুধুমাত্র একটি দেশ? না, গোটা একটি বাংলাদেশ গোটা একটি জেলা এবং একটি গ্রামও বটে! আশ্চর্য লাগছে? এই বাংলাদেশ রয়েছে ভারতেরই কাশ্মীরে। কাশ্মীরের উত্তরের জেলা বান্ডিপুরা থেকে মাত্র ৫ কিমি হেঁটে গেলেই এই মনোরম, একখণ্ড বাংলাদেশ। সুবিখ্যাত উলার হ্রদের তীরে অবস্থিত এই গ্রাম। এখানে বাইরের মানুষের নগণ্য।কাশ্মীর, ভূস্বর্গ। ঈশ্বরের এমন অবাক দেশে আরেক বাংলাদেশ মনকাড়া। গ্রামটি খুঁজছে নতুন ভাবে বাঁচার দিশা।
তবে এই গ্রামের সবাই স্থানীয়। বাংলাদেশের সঙ্গে এদের কোনও যোগ নেই। এই গ্রামের নাম “বাংলাদেশ” হলো কেন? এর প্রেক্ষাপট করুণরসে পূর্ণ। নামের সঙ্গে যোগ রয়েছে ৭১ এর মুক্তিযুদ্ধের।
১৯৭১ এ যখন পাকিস্তান হানাদার বাহিনীর নিষ্ঠুর আক্রমণ, তাদের লাগানো আগুনে বাংলা পুড়ছে, তখন কাশ্মীরের বান্ডিপুরায় একটি গ্রাম ছিল, নাম জুরিমন। সে আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে যায় ৫-৬টি ঘর। গৃহহীন হয়ে পড়ে গ্রামের মানুষ।
অসহায় মানুষগুলো ভস্মীভূত ঘরের দিকে তাকিয়ে চোখের জল ফেলে খানিকটা দূরে ফের নতুনভাবে বসবাস/ জীবন শুরু করেন। এবং এই একই সময় রক্তের বিনিময়ে স্বাধীনতা লাভ করে বাংলাদেশ! আবেগ; ভালোবাসায় উচ্ছ্বসিত জুরিমনের গরিব মানুষগুলো নিজেদের গ্রামের নাম রাখে “বাংলাদেশ”। আজ থেকে ১০ বছর পূর্বে অর্থাৎ ২০১০ সালে কাগজে-কলমে গ্রামের মর্যাদা লাভ করে এই বাংলাদেশ।
প্রথম অবস্থায় জুরিমন গ্রামে ছিল মাত্র ৫-৬টি ঘর। বর্তমানে এর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে অর্ধশতকেরও বেশি। অন্যদিকে জনসংখ্যা বেড়ে ৫০ জন থেকে হয়েছে সাড়ে ৩০০ জন। মাছ ধরাই মূলত এই গ্রামের মানুষের প্রধান জীবিকা নির্বাহের মাধ্যম। পাশাপাশি বাদাম সংগ্রহ করাও গ্রামবাসীর অন্যতম কাজ।
এ তো গেল বাংলাদেশ গ্রামের কথা! এবার ‘বাংলাদেশ’ জেলার বিষয়ে কিছুটা আলোচনা রইলঃ
বাংলাদেশ জেলার অবস্থান এশিয়ার পশ্চিমের দেশ আর্মেনিয়ায়।
এই দেশের রাজধানী ইয়েরেভান। পাহাড়-পর্বতে মায়ায় ঘেরা ইয়েরেভানের একটি এলাকার নামই বাংলাদেশ। এর অফিসিয়াল নাম ‘মালাতিয়া সেবাস্তিয়া’। কিন্তু স্থানীয়দের মধ্যে এটি জনপ্রিয় বাংলাদেশ নামেই। উল্লেখযোগ্য যে, এখানে বাংলা বা ইংরেজি ভাষা খুঁজেও কোথাও পাওয়া যাবে না। সমস্তটাই চলে আর্মেনিয়াম ভাষায়।
বাংলাদেশ জেলার জনসংখ্যা প্রায় দেড় লক্ষের মতো। এদের মধ্যে ৯৯ শতাংশ আর্মেনিয়া। তবে মজার বিষয়টি হলো ওরা আর্মেনিয় হলেও বাংলাদেশি নামেই কিন্তু পরিচিত।
আর্মিনিয়ার সঙ্গে তো বাংলাদেশের সম্পর্ক অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ। তা আমরা সবাই জানি। অষ্টাদশ শতকে আর্মেনিয়ারা নিজেদের জীবন সুন্দর করে গোছানোর লক্ষ্যে ঢাকায় আসতেন। তৎকালীন সময় ইস্ট ইণ্ডিয়া কোম্পানীর লবণের ঠিকাদারদের মধ্যে অধিকাংশই ছিলেন এই আর্মেনিয়ানরা।
আর্মেনিয়ানরা যেখানে অবস্থান করতেন সে স্থানের নামকরণ হয় আরমানিটোলা। এটি পুরান ঢাকায় রয়েছে। ছিন্নমূল বাঙালির কাছে এই গ্রাম একটুকু ছোঁওয়া লাগে, একটুকু কথা শুনি–. তাই দিয়ে মনে মনে রচি মম ফাল্গুনী হতেই পারে তাই না?
সময় বের করে একবার চলে যান মুক্তিযোদ্ধাদের আগুনঝরা নিঃশ্বাসের শব্দ শোনার এবং’দ্যাশ’এর মাটিকে চোখের জলে অনুভব করার জন্যে একখণ্ড বাংলাদেশে!