আঞ্চলিক ভাষায় বলা হয়, ‘দেশ থিক্যা শান্তির মা মইর্যা গেসে’। আসলে কি সত্যিই শান্তির মা বলে কোনকালে কেউ ছিল না আছে? শান্তির মাকেও গড়বে মানুষ, অশান্তির মাকেও গড়বে মানুষ। চাইলে সব করতে পারে এই সমাজ। পরিবেশ নষ্টও করতে পারে, সৃজনও করতে পারে।
বাংলাদেশের মানবতাবাদী লেখক তসলিমা নাসরিন লিখেছেন, ‘এই সমাজ দিয়ে কিচ্ছু হবে না’। কারণ যে সমাজকে ‘নির্যাতন’ এবং আরো বহু সমস্যা একটা ঘায়ের মতো পচিয়ে ফেলছে, সে সমাজের কাছে যদি পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধি অধিকতর মূল্যবান হয়ে ওঠে, তাহলে ‘এই সমাজ দিয়ে কিচ্ছু হবে না।’
যেখানে বড় বড় সমস্যাগুলো বিরাজমান, যেখানে নারী হত্যা চলছে, নারী ধর্ষণ চলছে, শিশু পাচার কোনক্রমেই বন্ধ করা যাচ্ছে না, বেড়ে চলেছে নৃশংসতা। অথচ দেখা যায় এমন অপরাধের বিরুদ্ধে কোন আন্দোলনও গড়ে তোলা হয় না। এসব নিয়ে সরকার কিংবা সমাজের কোন দায়বদ্ধতা নেই। সে জায়গায় একটি দেশ প্রচণ্ড আতংকিত হয় পেঁয়াজ নামক একটি আনাজের দাম বাড়লে!
লেখক লিখছেন, “বিশুদ্ধ খাবার জল নেই। ভরপেট খাবার নেই। মাথার ওপর ছাদ নেই। টয়লেট নেই। চাকরি নেই। উপার্জন নেই। শিক্ষা নেই। অসুখ বিসুখে চিকিৎসা নেই। জীবনের নিরাপত্তা নেই। শিশুদের পাচার করা হচ্ছে, যৌনদাসি বানানো হচ্ছে। নারী নির্যাতন চলছে, নারী হত্যা চলছে। এসবে প্যানিক নয় মানুষ, এসবের বিরুদ্ধে বড় সড় আন্দোলনও হয় না। সরকার পড়ে যাওয়ার অবস্থা হয় না। প্যানিক সৃষ্টি হয় পেঁয়াজ নামক একটা আনাজ বা মশলার দাম বাড়লে।
এই সমাজ দিয়ে কিচ্ছু হবে না।”
মানব সমাজের ক্ষত পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধির চেয়ে আরো দগদগে। আমাদের সমাজ চরম আত্মমগ্ন, চরম স্বার্থপর ও ভোগবাদী ধারা প্রবল।
এমন ক্ষয়ে যাওয়া সমাজে সব রকমের খারাপ কিছু ঘটাই স্বাভাবিক। এমন সমাজে বৈষম্য থাকবে, ক্ষোভ বাড়বে, দ্বন্দ্ব, হানাহানি, সংঘাত, চুরি, খুন, সন্ত্রাস, ডাকাতি, মানবিক ধ্বস নামতে বাধ্য।
মাঝে মাঝে পুঞ্জিভূত ক্ষোভ সব তছনছ করে দেবে, একটু থিতিয়ে গিয়ে আরো বড় আকারে ফিরে আসবে, আরও বড় মানবিক বিপর্যয় হয়ে আসবে। এটা অবশ্যম্ভাবী।