ঢাকা: বাংলাদেশে (Bangladesh) টিকটকে সেলিব্রেটি বানানো ও বিদেশে ভালো বেতনের চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে টুম্পা (১৭) নামে এক কিশোরীকে গুজরাতে পাচার করে জোর করে দেহব্যবসায় নামানো হয়।
কিন্তু কিশোরী পালিয়ে গিয়ে তাদের সব অপকর্ম ফাঁস করে দিতে পারে এমন আশঙ্কা করে তাকে হত্যা করা হয়। হত্যাকাণ্ডের শিকার কিশোরী টুম্পা ঢাকার ডেমরার বাসিন্দা।
কিশোরীর অভিভাবকদের মামলা দায়েরের পর প্রধান অভিযুক্তসহ তিন পাচারকারীকে আটক করেছে করেছে দেশের এলিটবাহিনি র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটেলিয়ন-র্যাব সদস্যরা। তিনজনকে যশোর ও খুলনা এলাকায় অভিযান চালিয়ে গ্রেপ্তার করা হয়।
আটক করা হয়-নড়াইল জেলার কালিয়া উপজেলার বাসিন্দা আলী হোসেন (২০), খুলনা সদর থানার বাসিন্দা কুলসুম বেগম (৪৫) ও তার ছেলে আল-আমিন (১৯)। শনিবার বিকেলে এসব তথ্য জানান, র্যাব যশোর ক্যাম্পের কমান্ডার লে. এম নাজিউর রহমান।
তিনি জানান, বিষয়টি অবহিত হওয়ার পর থেকেই তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে আসামিদের অবস্থান নিশ্চিত করেন। এরপর শুক্রবার অভিযান চালিয়ে হত্যাকারী আলী হোসেন এবং পাচারকারী কুলসুম বেগম ও তার ছেলে আল-আমিনকে আটক করা হয়।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আসামিরা টুম্পাকে পাচার ও হত্যার কথা স্বীকার করেছে। টুম্পা হত্যার কাণ্ড ঢাকার ডেমরা থানায় মামলা হওয়ায় আসামিদের ডেমরা থানায় হস্তান্তর করা হচ্ছে।
র্যাব কোম্পানি কমান্ডার আরও জানান, আটক কুলসুম বেগমের মেয়ে বৃষ্টি এবং তার বর যশোরের অভয়নগর উপজেলার বাসিন্দা নবাব গুজরাতে বাস করে।
তারা বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থান থেকে অপ্রাপ্তবয়স্ক মেয়েদের পাচার করে নিয়ে যায়। এই কাজে সহযোগিতা করে বৃষ্টি ও নবাবের সহযোগী কুলসুম বেগম ও তার ছেলে আল আমিন।
এই চক্রের সদস্যরা পরিচয়ের সূত্র ধরে ঢাকার ডেমরার বাসিন্দা টুম্পাকে টিকটকে সেলিব্রেটি বানানো ও বিদেশে উচ্চ বেতনে চাকরির প্রলোভন দেখায়।
প্রলোভনের ফাঁদে ফেলে ২০২১ সালে টুম্পাকে খুলনায় কুলসুম বেগমের বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর বেনাপোল-পেট্রাপোল সীমান্ত দিয়ে ভারতে পাচার করা হয়। টুম্পাকে ভারতে একটি বাসায় আটকে রেখে ভারতের এনআইডি কার্ড ও আধার কার্ড তৈরি করে।
এরপর তাকে জোর করে অনৈতিক কাজ করানো হতো। আলী হোসেনের জিম্মায় অনৈতিক কাজ করার জন্য টুম্পাকে দুই মাস আটকে রাখা হয় এবং জোর করে টিকটক ভিডিও বানানো হতো। পাশাপাশি ভিকটিমকে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করা হতো।
পরবর্তীতে টুম্পা পাচারকারীদের অনেক গোপন তথ্য জেনে যায় এবং তাদের অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে দেশে ফেরার চেষ্টা করে। বিষয়টি জানতে পেরে নবাব ও বৃষ্টির নির্দেশে গত ২৬ জানুয়ারি আলি হোসেন টুম্পাকে হত্যা করে।
টুম্পার মরদেহ উদ্ধার হলে গুজরাত পুলিশ ফোন করে টুম্পার বাবাকে জানায় যে, তার মেয়েকে হত্যা করা হয়েছে। পরবর্তীতে অপর একটি ফোন নাম্বার থেকে ভিকটিমের বাবাকে জানানো হয় যে, আলি হোসেন তার মেয়েকে নৃশংসভাবে হত্যা করেছে। এ বিষয়ে ভিকটিমের বাবা র্যা ব বরাবর একটি অভিযোগ দায়ের করেন। এরপর অভিযানে নামে র্যাব।