ঢাকা: শুধুমাত্র শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থাই নয়- আছে আধুনিক সাজসজ্জা, নির্মাণশৈলি ও প্রযুক্তিসমৃদ্ধ sundarban-16 লঞ্চ। হৃদরোগে আক্রান্তদের জন্য রয়েছে করোনারি কেয়ার ইউনিট (সিসিইউ)। ওঠানামার জন্য আছে ক্যাপসুল লিফট।
চলবে Dhaka-barishal নৌরুটে। নিরাপত্তার জন্য সিসি ক্যামেরা, শিশুদের জন্য বিনোদন স্পেস, ফুডকোর্ট, ফার্মেসি, আধুনিক অগ্নিনির্বাপক এবং উন্মুক্ত ওয়াই-ফাইয়ের ব্যবস্থা। একজন কমান্ডারের নেতৃত্বে অন্তত ছয়জন সশস্ত্র আনসার সদস্য নিরাপত্তায় দায়িত্বে নিয়োজিত থাকবেন।
অর্থাৎ সমুদ্রগামী বড় জাহাজের আদলে তৈরি লঞ্চটিতে যাত্রীদের আকৃষ্ট করতে রাখা হয়েছে নানা ব্যবস্থা। নতুন এই লঞ্চটিতে রয়েছে আধুনিক জিপিএস সিস্টেম।
এর ফলে ক্যাপ্টেন সবকিছু বিবেচনা করে লঞ্চটিকে নিরাপদ গন্তব্যে নিয়ে যেতে পারবেন। লঞ্চটি চলবে হাইড্রলিক পদ্ধতিতে। এর রাডার ব্যবস্থা কুয়াশার মধ্যেও লঞ্চটিকে নিরাপদে চলতে সাহায্য করবে।
Barishal-dhaka নৌপথে চালু হতে যাচ্ছে এই আধুনিক ও বিলাসবহুল চারতলা লঞ্চ। লঞ্চটি নির্মাণ করেছেন দেশের অন্যতম নৌযান প্রস্ততকারী প্রতিষ্ঠান Sundarban নেভিগেশন কম্পানি।
লঞ্চের নাম রাখা হয়েছে MV sundarban-১৬। ঢাকা থেকে দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন নৌ-পথে এই কম্পানির আরো ৯টি লঞ্চ চলাচল করছে। তবে সুন্দরবন-১৬ লঞ্চটির আধুনিক সাজসজ্জা, নির্মাণশৈলি ও প্রযুক্তি অন্য লঞ্চগুলোকে হার মানাবে বলে মালিকপক্ষ দাবি করেছেন।
বুধবার (১৬ নভেম্বর) লঞ্চটি উদ্বোধন করা হবে। Sundarban নেভিগেশন কম্পানির চেয়ারম্যান সাইদুর রহমান রিন্টু বলেন, আগের লঞ্চগুলোর চেয়ে এটা আলাদা। আগে ডেকের যাত্রীদের বিষয়টি মাথায় রেখে লঞ্চ নির্মাণ করা হতো। Padma সেতু উদ্বোধনের ফলে ডেকের যাত্রী কমেছে।
কিন্তু প্রথম শ্রেণির যাত্রী কমেনি। মূলত, প্রথম শ্রেণির যাত্রীদের কথা মাথায় রেখে কেবিন বাড়ানো হয়েছে। নতুন নতুন প্রযুক্তি সংযোজন করা হয়েছে। যাতে করে এক শ্রেণির যাত্রী সবসময় লঞ্চে যাতায়াত করেন। লঞ্চ আরো রাতে ছাড়া যায় কিনা সেটা নিয়েও ভাবা হচ্ছে।
রাজধানী Dhakaর সঙ্গে দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের যোগাযোগের পুরনো বাহন লঞ্চ। ঢাকা থেকে বিভিন্ন রুটে লঞ্চ চলে। তবে সবচেয়ে বড় লঞ্চগুলো চলে Dhaka-barishal রুটে। এ রুটে ১৯৯০ সালের দিকে অ্যাটলাস সন, রাজহংস, দ্বীপরাজ ইত্যাদি ছোট ছোট লঞ্চ চলত।
এরপর Sagar নামে একটি বড় লঞ্চ এ পথে প্রথম চলাচল শুরু করে। এক যুগ আগেও ছোট একটি লঞ্চ তৈরিতে ব্যয় হতো ছয়-সাত কোটি টাকা। এখন লঞ্চের আকার যেমন বেড়েছে, তেমনি বেড়েছে বিনিয়োগের পরিমাণ।
তবে বিলাসবহুল ও আধুনিক প্রযুক্তির বড় লঞ্চের যাত্রা শুরু হয়েছে অন্তত এক যুগ আগে থেকে। নতুন করে লঞ্চ আনছে পারাবত, কীর্তনখোলা, সুন্দরবন, সুরভি, আগরপুর নেভিগেশনসহ কয়েকটি কোম্পানি। এমভি সুন্দরবন-১৬ লঞ্চটি প্রায় ২৫ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করা হয়েছে।
পদ্মা সেতু চালুর পর বাস সার্ভিসে কম সময়ে ঢাকায় যোগাযোগ স্থাপন হয়েছে। ধারণা করা হয়েছিল লঞ্চ ব্যবসায় ধ্স নামবে। যদিও সেতু চালুর শুরুর দিকে লঞ্চে যাত্রী সংকট দেখা দেয়। যাত্রী ধরে রাখতে ভাড়া কমানো হয়েছিল।
এমনকি যাত্রী সংকটের কারণে নৌরুটে যাত্রীবাহী লঞ্চ চলাচলের সংখ্যাও কমানো হয়। পাশাপাশি নতুন লঞ্চ তৈরির কাজও চলছিল। তারই ধারাবাহিকতায় সুন্দরবন-১৬ লঞ্চ যাত্রী পরিবহনে আগামী ২০ নভেম্বরের মধ্যে যুক্ত হচ্ছে।
প্রায় পাঁচ বছর আগে barishal নগরীর কীর্তনখোলা নদীর তীরে বেলতলা ফেরিঘাট এলাকায় সুন্দরবন নেভিগেশন ডক ইয়ার্ডে নির্মাণ শুরু হয়। বিশেষজ্ঞ নৌ স্থপতির নকশায় ও সমুদ্র পরিবহন অধিদপ্তরের প্যানেল প্রকৌশলীদের নিবিড় তত্ত্বাবধানে নির্মাণ কাজ চলছিল।
কিন্তু করোনাসহ বিভিন্ন সমস্যার কারণে প্রায় দুই বছর নির্মাণকাজ বন্ধ থেকে। তারপর টানা দুই বছর প্রতিদিন প্রায় ২০০ শ্রমিক নিরলস পরিশ্রম করে সুন্দরবন-১৬ লঞ্চের নির্মাণ কাজ শেষ করেছেন। লঞ্চটির অনুমোদিত যাত্রী ধারণক্ষমতা এক হাজার ২০০ জন।
এছাড়াও পাঁচ শতাধিক টন পণ্য পরিবহনের সক্ষমতা রয়েছে নৌযানটির। প্রায় ৩৩৫ ফুট দৈর্ঘ্যের এ লঞ্চটির প্রস্থ ৫৮ ফুট। লঞ্চটির নিচতলার ডেকের অংশকে নিরাপদ করতে কয়েকটি ভাগে বিভক্ত করা হয়েছে। যাতে কোনো অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হলেও পুরো লোয়ার ডেকে পানি প্রবেশ না করতে পারে।
এতে ক্ষতিগ্রস্ত অংশে পানি প্রবেশ করলেও লঞ্চটি ভেসে থাকতে পারবে। এছাড়া, ডেক থেকে শুরু করে প্রতি তলার ভেতরের নকশায় আনা হয়েছে নতুনত্ব। যদিও বাইরে থেকে লঞ্চটি দেখতে বরিশাল-ঢাকা রুটে চলাচলকারী এমভি-সুন্দরবন ১০ ও ১৪ এর মতোই।
বড় আকারের প্রপেলার দিয়ে লঞ্চটিকে চালনা করে এগিয়ে নিয়ে যেতে ব্যবহার করা হচ্ছে জাপানের বিখ্যাত ডিইজাটসুর ইঞ্চিন। আর আনুমানিক সাত হাজারের মতো আলোকবাতিসহ কয়েকশ ফ্যান ও এসি চালনার জন্য বেশ কয়েকটি জেনারেটর ইঞ্জিনও থাকছে লঞ্চটিতে।
লঞ্চের ২য়, ৩য় এবং ৪র্থ তলায় ১৮৭টি প্রথম শ্রেণির কক্ষ (কেবিন) রয়েছে। এর মধ্যে ছয়টি ভিআইপি, আটটি সেমি ভিআইপি, পাঁচটি এক্সএল, পাঁচটি ফ্যামিলি, ৯৫টি সিঙ্গেল এবং ৬৫টি ডাবল কেবিন রয়েছে। প্রথম শ্রেণি ও ভিআইপি কক্ষসহ ডেক যাত্রীদের জন্য পর্যাপ্ত আলো ও বাতাস নিশ্চিতকরণে তিনটি জেনারেটর আছে।
একটি স্ট্যান্ডবাই জেনারেটরও সংযোজন করা হয়েছে। লঞ্চটির সবচেয়ে আকর্ষণীয় দিক হচ্ছে এর অন্দরসজ্জা। বর্ণিল বৈদ্যুতিক আলোকসজ্জা দিয়ে আলোকিত করা হয়েছে লঞ্চটিকে। লঞ্চের প্রতিটি কেবিন দৃষ্টিনন্দন আসবাবপত্র দিয়ে সাজানো হয়েছে।
নৌযানটিতে আধুনিক রাডার ছাড়াও জিপিএস পদ্ধতি সংযুক্ত করা হয়েছে। ফলে লঞ্চটি চলাচলরত নৌপথের এক বর্গকিলোমিটারের মধ্যে গভীরতা ছাড়াও এর আশপাশের অন্য যেকোনো নৌযানের উপস্থিতি চিহ্নিত করতে পারবে।
এমনকি ঘন কুয়াশার মধ্যেও নৌযানটি নির্বিঘ্নে চলাচল করতে পারবে বলে জানায় লঞ্চ কর্তৃপক্ষ। সুন্দরবন নেভিগেশন কম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক শহিদুর রহমান পিন্টু বলছেন, জাপানের একটি কম্পানির তৈরি এক হাজার ২০০ অশ্বশক্তির দুটি মূল ইঞ্জিন রয়েছে।
সুন্দরবন-১৬ লঞ্চ পরিচালনার জন্য মাস্টার অফিসার ও ইঞ্জিন অফিসার ছাড়াও মোট ৫০ জন বিভিন্ন শ্রেণির কর্মী থাকছেন। তবে অত্যাধুনিক এ নৌযানটির সব শ্রেণির যাত্রী ভাড়া অন্যসব নৌযানের মতোই থাকছে।