ঢাকা: বাংলাদেশের কিশোরগঞ্জে ভৈরবের জগন্নাথপুর রেল ক্রসিং এলাকায় সোমবার বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে দুই ট্রেনের মুখোমুখি সংঘর্ষে ২৪ জন নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন আরও ৪০ জন।
নিহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। কিশোরগঞ্জ থেকে ঢাকাগামী এগারসিন্দুর গোধূলি ও ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা কন্টেইনারবাহী ট্রেনের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
সংঘর্ষের ফলে ট্রেনের কয়েকটি বগি দুমড়ে-মুচড়ে গিয়ে নিচে চাপা পড়ে বহু লোক। হতাহতদের উদ্ধারে কাজ করছে স্থানীয় জনগণ, পুলিশ, র্যাব, বিজিবি ও ফায়ার সাভিসের ১৩টি ইউনিট। দুমড়ে-মুচড়ে যাওয়া ট্রেনের ভিতর থেকে একে একে বেরিয়ে আসছে রক্তাক্ত মরদেহ। দুর্ঘটনাস্থলে হতাহতদের স্বজনরা আহাজারি করছে। উক্ত ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন করেছে বাংলাদেশ রেলওয়ে।
স্থানীয়রা জানান, সোমবার বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে মালবাহী ট্রেনটি ঢাকা থেকে চট্টগ্রামের দিকে যাচ্ছিল, আর যাত্রীবাহী ট্রেন এগারসিন্দুর এক্সপ্রেস গোধূলি যাচ্ছিল ভৈরব থেকে ঢাকায়।
ভৈরব রেল স্টেশনের আউটার পয়েন্টে জগন্নাথপুর রেল ক্রসিংয়ে ট্রেন দুটির মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এ সময় যাত্রীবাহী ট্রেনের কয়েকটি বগি দুমড়ে-মুচড়ে যায়। তাৎক্ষণিকভাবে হতাহতদের উদ্ধার কাজে এগিয়ে আসেন স্থানীয়রা।
ঘটনা স্থল থেকে ফায়ার সার্ভিস ও পুলিশ সদস্যরা ২৪ জনের মরদেহ উদ্ধার করেছে। দুর্ঘটনা কবলিত ট্রেনের নিচে এখনও অনেকের মরদেহ চাপা পড়ে রয়েছে। নিহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে জানিয়েছে ফায়ার সার্ভিস। দুর্ঘটনার পর ঢাকার সঙ্গে ময়মনসিংহ, সিলেট, চট্টগ্রাম ও নোয়াখালী রুটে ট্রেন চলাচল বন্ধ রয়েছে।
ভৈরব রেলওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত (ওসি) মো. আলিম হোসেন শিকদার জানায়, সোমবার বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে ঢাকামুখী যাত্রীবাহী এগারসিন্দুর এক্সপ্রেস গোধূলি ট্রেনের সঙ্গে কিশোরগঞ্জমুখী মালবাহী একটি ট্রেনের মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়।
সংঘর্ষে যাত্রীবাহী ট্রেনের তিনটি বগি লণ্ডভণ্ড হয়ে গেছে। ঘটনাস্থলে উদ্ধার কাজ করছে ফায়ার সার্ভিস। ধারণা করা হচ্ছে ট্রেনের নিচে এখনো অনেক মরদেহ চাপা পড়ে আছে। এখন পর্যন্ত দুর্ঘটনার কারণ জানা যায়নি।
আরএনবি (বিমানবন্দর সার্কেল) সিআই সিরাজ জানিয়েছেন, ঢাকা থেকে একটি কন্টেইনারবাহী ট্রেন ভৈরব স্টেশনে প্রবেশ করছিল। তার আগ মুহূর্তে ভৈরব থেকে এগারসিন্দুর ট্রেন ঢাকার দিকে রওনা হয়েছিল।
জগন্নাথপুর রেল ক্রসিং এলাকায় এগারসিন্দুর ট্রেনের শেষের তিনটি বগিতে কন্টেইনারবাহী ট্রেনের ইঞ্জিন আঘাত করে। মূলত সিগনালিংয়ের কোনো জটিলতার কারণে এমন ঘটনা ঘটেছে। সেখানে উদ্ধারকাজে যোগ দিয়েছে ফায়ার সার্ভিস ও পুলিশ। এছাড়া ঢাকা থেকে উদ্ধারকারী রিলিফ ট্রেন ভৈরবে গেছে। দুর্ঘটনার পর থেকে ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটে ট্রেন চলাচল বন্ধ রয়েছে।
কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনের স্টেশন মাস্টার আফছার উদ্দিন বলেন, উদ্ধার কাজের জন্য রিলিফ ট্রেন যাচ্ছে। উদ্ধার কাজ শেষ হলে ট্রেন চলাচল শুরু হবে।
ভৈরব বাজার ফায়ার স্টেশনের ফায়ার ফাইটার মো. রাসেল বলেন, কিশোরগঞ্জ থেকে ঢাকাগামী এগারোসিন্ধুর গোধূলির সঙ্গে ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা কনটেইনারবাহী একটি ট্রেনের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
আমরা বিকেল ৪টার দিকে দুর্ঘটনার খবর পাই। ২৪ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। উদ্ধারকাজ অব্যাহত আছে। অন্তত ৪০ জন আহত হয়েছেন।
ভৈরব রেলস্টেশনের মাস্টার মো. ইউসুফ বলেন, ঢাকা থেকে কনটেইনারবাহী একটি ট্রেন বিকেলে ভৈরব স্টেশনে প্রবেশ করছিল। তার আগ মুহূর্তে ভৈরব থেকে এগারোসিন্ধুর ট্রেন ঢাকার দিকে রওনা হয়েছিল।
জগন্নাথপুর রেলক্রসিং এলাকায় এগারোসিন্ধুর ট্রেনের শেষের দুই-তিনটি বগিতে কনটেইনারবাহী ট্রেনের ইঞ্জিন আঘাত করে। এতে দুর্ঘটনা ঘটে।
কিশোরগঞ্জের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ বলেন, এখন পর্যন্ত ২৪ জন নিহতের তথ্য নিশ্চিত হয়েছি। এখনও উদ্ধারকাজ চলছে। ক্ষতিগ্রস্ত ট্রেনের বগিগুলো উদ্ধারে ঢাকা থেকে উদ্ধারকারী ট্রেন আসছে। নিহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে।