“বাংলাদেশকে গিলে খাবে ধর্ম নামের বিকট অজগর।”
যেখানেই ধর্ম নিয়ে হানাহানি, সেখানেই শান্তির বার্তা নিয়ে উপস্থিত হন ধর্মনিরপক্ষে, নারীবাদী লেখক তসলিমা নাসরিন।
টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে মহানবী (সা.), মসজিদের ইমাম ও ইসলামের নানা বিষয়ে নাকি ভুল ব্যাখ্যা দিয়েছেন বাউলশিল্পী শরিয়ত বয়াতী (৩৫)। বাংলাদেশের প্রথামাফিক এই অভিযোগে তাঁকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। শুধু তাই নয়, গোঁড়া ইসলামপন্থীরা বাউলশিল্পীর ফাঁসির দাবিতে পথে নেমেছে ফের।
শনিবার সকালে ময়মনসিংহ জেলার ভালুকা উপজেলার বাশিল এলাকা থেকে শরিয়তকে গ্রেপ্তার করা হয়।
তীব্র প্রতিবাদে ফেটে পড়েছেন বাংলাদেশের নির্বাসিত লেখক তসলিমা নাসরিন।
তিনি মৌলবাদীদের বিরুদ্ধে শাণিত কটাক্ষ করে লিখেছেন, “শরিয়ত যদি আল্লাহর বিরুদ্ধে কিছু বলেও থাকে তা বলুক না, আল্লাহই তার বিচার করবে। কিন্তু আল্লাহর বিচারের ওপর বিন্দুমাত্র আস্থা এদের নেই, সে কারণে নিজেরাই বয়াতির বিচার করতে চাইছে।”
“তিরানব্বই চুরানব্বই সালে বাংলাদেশে আমার ফাঁসির জন্য মিছিল মিটিং করতো আল্লাহ-রসুলের সেনাবাহিনী । তারপর ২৫ বছর চলে গেল, এখনও ওরা এবং ওদের বংশধরেরা কারো না কারো ফাঁসির জন্য একই রকম ভাবে মিছিল মিটিং করছে। দেশে কি মানুষ নেই যে এই অমানুষগুলোর বীর্যপাত বন্ধ করে, যেন নতুন করে কোনও অমানুষ আর জন্ম নিতে না পারে?
দেশের ভেতর মুক্তচিন্তকদের কুপিয়ে মারলো এরা। বিদেশিদের খুন করলো, কারণ তারা মুসলমান নয়। শুভবুদ্ধি সম্পন্ন মানুষদের দেশান্তরী হতে বাধ্য করলো। এখন বাউল বয়াতিদের নিশানা করেছে। শরিয়ত বয়াতি নামে এক বয়াতি বাস করে বাংলাদেশের গঞ্জে, সে নাকি আল্লাহর বিরুদ্ধে কিছু বলেছে। তা বলুক না, আল্লাহই তার বিচার করবে। কিন্তু আল্লাহর বিচারের ওপর বিন্দুমাত্র আস্থা এদের নেই, সে কারণে নিজেরাই বয়াতির বিচার করতে চাইছে।
একদিন এই টুপি দাড়িওয়ালা আর হিজাব বোরখাওয়ালী কূপমণ্ডুপগুলোই থাকবে দেশ জুড়ে। এরাই ইসলামি আইন এবং সংস্কৃতি কায়েম করবে, এরাই শাসন করবে দেশ।”
মানবতাবাদী লেখক তসলিমা নাসরিনের উক্ত ফেসবুক পোস্টে প্রায় প্রত্যেকে বাংলাদেশের ভবিষ্যত যে শুধুমাত্র ধর্মান্ধ, মৌলবাদীদের জন্যে নিশ্ছিদ্র অন্ধকারের দিকে গতি করছে সে কথা একবাক্যে স্বীকার করেছেন।
বাংলাদেশের আরো একজন লিখছেন স্পষ্টভাবে “ইসলামে গানবাজনা হারাম মেনে নিলাম। শরিয়ত বয়াতী হারাম কাজ করে তাই তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে, সেটাও মেনে নিলাম। কিন্তু দেশের লক্ষ লক্ষ মানুষ প্রতিদিন গানবাজনা করে, গানবাজনা করার জন্যে সরকারি মন্ত্রণালয় আছে, দেশে রেডিও, টেলিভিশন আছে। এসব কেন? এসব হারাম কাজ বন্ধ করে দেন।”
পুলিশ এবং স্থানীয় পক্ষের অভিযোগ, বয়াতি শরিয়ত সরকার গত ২৪ ডিসেম্বর ঢাকা জেলার ধামরাই উপজেলার রৌহাট্রেক পীর হযরত হেলাল শাহ’র দশম বাৎসরিক মিলনমেলায় পালাগানের অনুষ্ঠানে গান পরিবেশন করেছিলেন।
সেখানে তিনি বলেন, গান-বাজনা হারাম কোরানে কোথাও লেখা নেই। এ ছাড়া দাউদ (আ.) নবী কোন নবী না, তিনি বয়াতি ছিলেন। রাসুল (সা.) গান না শুনে ঘুমাইতেন না। নবীজি আবু মুসা আশয়ারী (র.) কে ২৩ রকমের গানের বাদ্যযন্ত্র হাদিয়া প্রদান করিয়াছেন। ওই সব বাদ্যযন্ত্র দাউদ নবীর ছিল। এ ছাড়া শরিয়ত মসজিদের ইমাম ও ইসলাম ধর্ম নিয়ে ভুল ব্যাখা দিয়ে বক্তব্য রাখেন বলে বিক্ষোভ শুরু হয়েছে দেশে।
বিগত ৯ জানুয়ারি শরিয়ত বয়াতির বিরুদ্ধে ধর্মীয় নিরাপত্তা আইন-২০১৮ ও ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে উপজেলার আগধল্যা গ্রামের মাওলানা মো. ফরিদুল ইসলাম বাদী হয়ে মির্জাপুর থানায় মামলা করেন।
থানার ওসি সায়েদুর রহমান জানাচ্ছেন, শরিয়ত বয়াতির বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করা হয়েছে। আদালত তাঁকে ৩ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন।
উল্লেখযোগ্য যে, ২৫ বছর পূর্বে তসলিমা নাসরিনের ফাঁসির দাবিতে পথে নেমেছিল প্রায় ১০ লক্ষ মৌলবাদি।
তসলিমার দেশত্যাগের ২৫ বছর চলছে। এই দু-যুগ পূর্বে বাংলাদেশে যে ধর্মান্ধতা বিরাজমান ছিল, যে মৌলবাদীর অত্যাচারে দেশ জর্জরিত ছিল আজ দু-যুগ পরেও সেই একই ছবি দেখা যাচ্ছে।
মুক্তচিন্তক, নাস্তিকদের দেশে এক তিলও ঠাই নেই। আছে কেবল কুসংস্কারিদের।
ইসলামিস্টদের ভয়ানক এ সমস্ত কার্যে তসলিমা স্পষ্ট, সরাসরিভাবে আঙুল তুলেছেন প্রধানমন্ত্রী হাসিনার দিকে। তিনি ট্যুইট করে লিখেছেন, ‘শেখ হাসিনাই ইসলামপন্থীদের বাড়াতে সাহায্য করছেন।’