ঢাকা: বাংলাদেশে (Bangladesh) চিত্রনায়িকা মাহিয়া মাহিকে (Mahiya Mahi) শনিবার দুপুর পৌনে ১২টায় ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে গ্রেফতার করা হয়।
পুলিশের সুনাম ক্ষুন্ন করার অভিযোগে চিত্রনায়িকা মাহিয়া মাহি গ্রেফতার করা হয়েছেন। তাকে ডিজিটাল নিরাপত্তা মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়েছে। বর্তমানে ৯ মাসের অন্তঃসত্ত্বা চিত্রনায়িকা মাহিয়া মাহি।
কিছু দিনের মধ্যেই মা হবেন তিনি। অন্তঃসত্ত্বার বিষয়টি আদালত বিশেষ বিবেচনায় চিত্রনায়িকা মাহিয়া মাহিকে জামিন দিয়েছেন। শনিবার বিকেলে মাহিয়া মাহির আইনজীবী অ্যাডভোকেট আনোয়ার সাদত বিষয়টি নিশ্চিত করেন। তিনি জানান, মাহিকে বিকেল ৫টায় জামিন দেন আদালত।
এর আগে শনিবার দুপুরে তাকে গাজীপুর মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত-৫ এ হাজির করা হয়। পরে শুনানি শেষে বিচারক কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। তার আগে দুপুর ১২টার দিকে মাহিয়া মাহিকে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে গ্রেফতার করে গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ।
পবিত্র ওমরাহ পালন শেষে দেশে ফেরার পরই তাকে গ্রেফতার করা হয়। গত শুক্রবার মাহি ও তার স্বামীর বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করেন জিএমপির বাসন থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মোহাম্মদ রোকন মিয়া।
মামলায় মাহির বিরুদ্ধে ফেসবুক লাইভে মানহানিকর তথ্য প্রচার করে আইনশৃঙ্খলার অবনতি ঘটানোর অভিযোগ আনা হয়েছে। আর তার স্বামী রকিব সরকারের বিরুদ্ধে কয়েক কোটি টাকা মূল্যের জমি দখল, মাদক ব্যবসা, চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন অপকর্মে জড়িত থাকার অভিযোগ আনা হয়েছে।
গত শুক্রবার ভোরে মাহিয়া মাহির স্বামী গাজীপুরের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ও আওয়ামী লীগ নেতা রকিব সরকারের একটি গাড়ির শো-রুমে হামলা ও ভাঙচুর চালায় দুর্বৃত্তরা। নগরীর ভাওয়াল বদরে আলম সরকারি কলেজের পূর্বপাশে সনিরাজ কার প্যালেস নামে ওই শো-রুমে হামলার ঘটনা ঘটে।
এরপর ফেসবুক লাইভে আসেন মাহি। কয়েক মাস আগে চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২ (গোমস্তাপুর-নাচোল-ভোলাহাট) আসনের উপ-নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করা নিয়ে ব্যাপক আলোচনায় আসেন মাহি।
এলাকায় গণসংযোগও করেন তিনি। তবে শেষ পর্যন্ত আওয়ামী লীগের সংসদীয় মনোনয়ন বোর্ডের মনোনয়ন পাননি এই ঢাকাই নায়িকা। মাহিয়া মাহির স্বামী রকিব সরকার আওয়ামী লীগের আগের কমিটির ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ উপকমিটির সহ-সম্পাদক ছিলেন। এছাড়া ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গেও তিনি সক্রিয়ভাবে জড়িত ছিলেন।
মামলার বিষয়ে গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মোল্যা নজরুল ইসলাম জানান, অপমান অপদস্ত ও হেয় প্রতিপন্ন করে বিভিন্ন মিথ্যা, বানোয়াট, আক্রমণাত্মক, কুরুচিপূর্ণ এবং মানহানিকর তথ্য প্রচার করে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতি করার অপরাধে রকিব সরকার ও তার স্ত্রী মাহিয়া মাহি সরকারের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করা হয়েছে।
স্বামীর সঙ্গে ওমরাহ পালন করতে যাওয়া চিত্রনায়িকা মাহি গত শুক্রবার সৌদি আরবের মক্কা শহর থেকে ফেসবুক লাইভে রকিবের গাড়ির শো-রুম ভাঙচুর ও হামলার অভিযোগ করেন। এর কিছু সময় পর রকিব ও মাহি ফেসবুক লাইভে এসে বলেন, গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মোল্যা নজরুল ইসলাম দেড় কোটি টাকার বিনিময়ে আমাদের গাড়ির শো-রুম দখল করতে দিচ্ছে ইসমাইল ওরফে লাদেনকে।
এরপর ওই দিন রাত সাড়ে ১২টার দিকে মাহি ও রকিব সরকার আবারও ফেসবুক লাইভে আসেন। তারা বলেন, গাজীপুর পুলিশ আমাদের সিকিউরিটিসহ অন্যান্যদের অ্যারেস্ট করেছে। আমাদের শো-রুম থেকে সবাইকে বের করে দিচ্ছে। বলেছে, না বের হলে গুলি করবে। পুলিশ কখনও এগুলো করতে পারে? আমরা সকালে এয়ারপোর্টে নামব। হয়তো আমাদেরও গ্রেফতার করবে।
সূত্র জানায়, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলার আসামি হওয়ার খবর আগেই জেনেছিলেন চিত্রনায়িকা মাহিয়া মাহি। এই মামলায় গ্রেফতার হওয়ার ঝুঁকি নিয়েই ওমরাহ পালন শেষে গতকাল শনিবার দেশে ফেরেন তিনি। মাহিকে গ্রেফতার অভিযানে অংশ নেওয়া পুলিশের দসস্য এবং বিমানবন্দরে কর্তব্যরত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা বলছেন, মাহি বোরকা পরে বিমান থেকে নেমেছিলেন।
মামলার বিষয়টি তিনি আগেই জেনেছিলেন। বিমানবন্দরে নেমে গ্রেফতার হতে পারেন সেই আশঙ্কা থেকে তিনি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নজরদারি এড়াতে ছদ্মবেশ নিয়েছিলেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
ইমিগ্রেশন পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, গতকাল সকাল ১০টা ৫০ মিনিটে সৌদি আরব থেকে বিজি ৩৩৬ ফ্লাইটে জেদ্দা থেকে মাহি শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করেন। ৪ নম্বর বোর্ডিং ব্রিজের ৬ নম্বর বেল্টে তার লাগেজ ছিল।
গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের গোয়েন্দা শাখার এক কর্মকর্তা জানান, বিমানবন্দরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চোখ এড়াতে পারেননি মাহি। বিমান থেকে নামার পর ইমিগ্রেশন অফিসাররা মাহির ইমিগ্রেশন শেষ করেন। এরপর আমাদের হাতে মাহিকে তুলে দেওয়া হয়।