ঢাকা: দুর্গাপুজোর আগে সুখবর ভারতের পশ্চিমবঙ্গবাসীর জন্য। তবে পরিপূর্ণ নয়, আংশিক। এরআগে খবর ছিল-কলকাতা ফিশ ইম্পোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের আহবানে মান্যতা দিয়ে বাংলাদেশ থেকে পাঁচ হাজার টন ইলিশই রপ্তানি করা হবে।
বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি গত বৃহস্পতিবার ঢাকায় সচিবালয়ে মন্ত্রকের সভাকক্ষে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে এ তথ্য জানিয়েছিলেন। কিন্তু আজ বুধবার জানা গেল- এবার দুর্গাপুজো উপলক্ষে বাংলাদেশ থেকে তিন হাজার ৯৫০ টন ইলিশ রপ্তানির অনুমতি দিয়েছে সরকার।
আজ বুধবার বাণিজ্য মন্ত্রকের এক প্রজ্ঞাপনে রপ্তানির এ অনুমোদন দেওয়া হয়। প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়, মোট ৭৯টি প্রতিষ্ঠানের অনূকুলে ৩ হাজার ৯৫০ টন ইলিশ রপ্তানির অনুমতি দেওয়া হলো।
দুর্গাপুজো সামনে রেখে গত ১ সেপ্টেম্বর কলকাতা ফিশ ইমপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন কলকাতায় বাংলাদেশ উপ-হাইকমিশনে এক আবেদনে পাঁচ হাজার টন ইলিশের চাহিদার কথা জানায়। ৪ সেপ্টেম্বর সেই আবেদন ঢাকায় বাণিজ্য মন্ত্রকে পৌঁছে।
গত বছর পুজোর সময় ২ হাজার ৯০০ টন ইলিশ রপ্তানির অনুমতি দেওয়া হয়েছিল। তবে রপ্তানি হয় ১ হাজার ৩০০ টন। আগের বছরগুলোতেও একই পরিস্থিতি হয়েছিল। অনুমোদনের তুলনায় রপ্তানির পরিমাণ ছিল ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ কম।
রপ্তানি শাখার একজন ঊর্ধ্বতন আধিকারীক জানিয়েছেন, দুর্গাপুজো উপলক্ষ্যে ভারতে এবারও ইলিশ রপ্তানির অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। গতবার যে-সব প্রতিষ্ঠানকে অনুমোদন দেওয়া হয়েছিল তাদের মধ্যে অনেকে নির্ধারিত পরিমাণ মাছ রপ্তানি করতে পারেননি। অনেকে একেবারেই রপ্তানি করতে পারেননি।
ইলিশ রপ্তানির বিষয়টি মূলত কি পরিমাণ ধরা পড়ল তার ওপরে অনেকটা নির্ভর করে। তাই আমরা প্রতিষ্ঠানের সক্ষমতা দেখে অনুমতি দিয়েছি। বাজারে এর কোনো প্রভাব পড়বে না বলে মনে করেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি। বাণিজ্যমন্ত্রক এবার পশ্চিমবঙ্গে ইলিশ রপ্তানির জন্য ৯৬ প্রতিষ্ঠানকে অনুমতি দিয়েছে।
যদিও ইলিশ রপ্তানির অনুমোদন চেয়ে একশো প্রতিষ্ঠান আবেদন করেছিল। প্রতি বছরের ধারাবাহিকতা বজায় রেখেই বাংলাদেশ এবারও ইলিশ রপ্তানির অনুমতি দিয়েছে।
কলকাতা ফিশ ইম্পোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে চিঠিতে আরও বলা হয়, পদ্মার ইলিশ শুধু রপ্তানিযোগ্য সুস্বাদু মাছই নয়।
কলকাতার মানুষ এটাকে ঢাকার পাঠানো বহু মূল্যবান উপহার হিসেবে মনে করেন। একই সঙ্গে উন্নত গুণাগুণ সমৃদ্ধ বড় মাপের ইলিশ চেয়েছে কলকাতা। বাংলাদেশ সরকারের পরিকল্পনা নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে রপ্তানি কার্যক্রম শেষ করা।
এদিকে দুর্গাপুজো শুরু হবে ২০ অক্টোবর থেকে। অক্টোবরে ২২ দিনের জন্য মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞা থাকে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রকের পক্ষ থেকে। এবারও তার ব্যত্যয় ঘটেনি। গত বছর নিষেধাজ্ঞা শুরু হয়েছিল ৭ অক্টোবর থেকে। বাণিজ্য মন্ত্রক এবার আগেভাগেই ইলিশ রপ্তানির অনুমোদন দিচ্ছে। যেসব প্রতিষ্ঠানকে রপ্তানির অনুমতি দেওয়া হবে, তারা সে অনুযায়ী কাজ করছে কিনা, তা নজরদারিও করবে বাণিজ্য মন্ত্রক।
২০১২ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত রপ্তানি বন্ধ থাকলেও ২০১৯ থেকে ভারতে আবার ইলিশ রপ্তানি শুরু হয়। বাংলাদেশ হিমায়িত খাদ্য রপ্তানিকারক সমিতির (বিএফএফইএ) হিসাবে, দেশে বছরে সাড়ে পাঁচ থেকে ছয় লাখ টন ইলিশ উৎপাদিত হয়। তা থেকে রপ্তানি যেটুকু হয়, তা খুবই সামান্য। এ কারণে দাম ও সরবরাহে খুব একটা প্রভাব পড়ে না বাজারে।
সম্প্রতি কলকাতায় বাংলাদেশের উপহাইকমিশনের প্রথম সচিব (বাণিজ্যিক) শামছুল আরিফ ভারতে ইলিশ রপ্তানির অনুমতি চেয়ে বাংলাদেশ সরকারকে একটি চিঠি দেন। ওই চিঠিতে বাংলাদেশ থেকে ইলিশ রপ্তানির জন্য ৬০ দিন সময় চেয়েছেন।
এতে কলকাতার ফিশ ইমপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের আবেদনের বিষয় উল্লেখ করা হয়। এ বিষয়ে কলকাতা ফিশ ইমপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আনোয়ার মাকসুদ বলেন, গত বছরের মতো এ বছরও আমরা কলকাতায় বাংলাদেশের উপ-হাইকমিশনারের কাছে চিঠি দিয়েছি।
আমরা অনুরোধ করেছি যেন ইলিশ আমদানিতে আমাদের পর্যাপ্ত সময় দেওয়া হয়। যেমন গত বছর আমরা ২ হাজার ৯০০ টন আমদানির অনুমতি পেলেও সময়ের অভাবে এক হাজার ৩০০ টন ইলিশ আমদানি করতে পেরেছি। কবে থেকে রপ্তানি কার্যকর হবে, জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, আমরা পূজার সময়ে প্রতিবছর দিই। এবারও দেব।
এখন ইলিশের মৌসুম হলেও বাংলাদেশের বাজারে চড়া দাম। তারপরও ইলিশ রপ্তানির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। কী পরিমাণ রপ্তানি করা হবে, এতে বাজারে কোনো নেতিবাচক প্রভাব পড়বে কিনা- এমন প্রশ্নে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, ইলিশ আমরা নিয়মিত রপ্তানি করি না।
শুধু দুর্গাপূজায় যেসব বাঙালি আমাদের মতো ইলিশ খেয়ে থাকেন, তাদের জন্য এই উৎসবের সময় শুভেচ্ছাস্বরূপ ইলিশ দেওয়া হয়। যেমন আমের সময়, আমরা আম পাঠাই। সারাবছর কিন্তু আমরা এক ছটাকও ইলিশ রপ্তানি করিনি। এই ১৫ দিন কিংবা এক মাসের জন্য টোকেনস্বরূপ কিছু ইলিশ রপ্তানি করব।