ঢাকা: বাংলাদেশে কক্সবাজারের রোহিঙ্গা শরনার্থী শিবিরগুলোতে তরুণী-যুবতীদের দিয়ে দেহ ব্যবসা, বিদেশে পাচার ও আধিপত্য বিস্তার নিয়ে খুনোখুনি থামছেনা।
আর এ কাণ্ডে মূল হোতা হচ্ছে- মায়ানমারের সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান স্যালভেশন আর্মি (আরসা) ও মায়ানমারের বিদ্রোহী সংগঠন রোহিঙ্গা সলিডারিটি অর্গানাইজেশনের (আরএসও ) ।
সোমবার ভোর সাড়ে ৪টার দিকে উখিয়ার ক্যাম্প-৫ এলাকার ইরানি পাহাড় ও ক্যাম্প-২ (ইস্ট)’র বালুর মাঠ এলাকায় এ গুলিযুদ্ধ ঘটে। ক্যাম্পে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা ১৪ এপিবিএন অধিনায়ক ও অতিরিক্ত ডিআইজি সৈয়দ হারুন অর রশিদ জানান, নিহতরা হলেন: উখিয়ার রোহিঙ্গা ক্যাম্প-৭ ব্লাক, ডি/৫ মৃত মীর আহমেদের ছেলে সাকিবুল হাসান প্রকাশ সানাউল্লাহ (৩৩) ও একই ক্যাম্পের জি সাব ব্লক, এ/ ৩৮ আব্দুর গফুরের ছেলে আহমদ হোসেন (৩৫)।
তিনি জানান, নিহতরা আরসা সন্ত্রাসী। উখিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) শেখ মোহাম্মদ আলি জানান, রোহিঙ্গা ক্যাম্পে দু’সন্ত্রাসী গ্রুপের মধ্যেই গোলাগুলিতে দু’জন নিহতের ঘটনা জানার পর থানার একটি টিম ঘটনাস্থলে যায়। লাশ উদ্ধার করে সুরতহাল রিপোর্ট তৈরির পর ময়নাতদন্তের জন্য কক্সবাজার সদর হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়।
এর আগে গত মঙ্গলবার রাতে ও বুধবার ভোরে উখিয়ার রোহিঙ্গাশিবিরে গুলিযুদ্ধে নিহত হয় দুই গ্রুপের দুই জঙ্গি সদস্য। মায়ানমারের সশস্ত্র গোষ্ঠী আরসা ও অপর বিদ্রোহী সংগঠন রোহিঙ্গা আরএসও মধ্যে গুলিযুদ্ধে দুইজন নিহত হয়।
বাংলাদেশে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের বাড়-বাড়ন্ত নিয়ে আশ্রয়দাতা খোদ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা খু্বই বিরক্ত। ২০১৭ সালের আগস্টে মায়ানমার সেনাবাহিনীর হত্যা ও অত্যাচার থেকে বাঁচতে ধাপে ধাপে সাত লাখ রোহিঙ্গা নাগরিক পালিয়ে সীমান্ত সংলগ্ন বাংলাদেশের কক্সবাজার জেলায় এসে আশ্রয় নেয়।
এর আগে এসেছিল চার লাখ রোহিঙ্গা। জন্ম নিয়েছে আরও দুই লাখ রোহিঙ্গা শিশু। এই ১৩ লাখ রোহিঙ্গার ভারে জনাকীন বাংলাদেশ হিমশিম খাচ্ছে। আশ্রয়গ্রহণকারীদের মধ্যে মিশে কিছু রোহিঙ্গার জঙ্গি-সন্ত্রাসীও বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করে।
এখন বাংলাদেশে আশ্রিত হয়েও তাদের পুরোনো পেশাতেই রয়েছে। তাদের এই সন্ত্রাসী কাণ্ডে স্থানীয় বাসিন্দারা ভীত-সন্ত্রস্থ। গত মাসে রোহিঙ্গাদের বাস্তুচূত হওয়ার ছয় বছর পূর্ণ হয়েছে।
কক্সবাজার আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন (এপিবিএন)-১৪-এর অধিনায়ক মোহাম্মদ ইকবাল মিডিয়াকে জানান, মঙ্গলবার রাত ১২টার দিকে ক্যাম্প-৮ ডব্লিউ এলাকায় আধিপত্য বিস্তারের জেরে আরসা ও আরএসও’র মধ্যে গুলিযুদ্ধ হয়।
একপর্যায়ে আরএসও’র ছোড়া গুলিতে আরসার কিলিং গ্রুপের শীর্ষ কমান্ডার চাকমাইয়া ইউসুফ গুলিবিদ্ধ হন। পরে তাকে জবাই করে হত্যা করা হয়। তার বিরুদ্ধে তিনটি হত্যা মামলা রয়েছে। মঙ্গলবার রাতের ঘটনার জেরে আরসার সদস্যরা বুধবার ভোর ৫টার দিকে ১৫ নম্বর ক্যাম্পে আরএসও’র ওপর হামলা চালায়।
এ সময় আরাফাত নামে আরএসও’র এক সদস্যকে ছুরিকাঘাতে হত্যা করে আরসার সন্ত্রাসীরা।এদিকে আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি আরসার প্রধান আতাউল্লাহর একান্ত সহকারী, অর্থ সমন্বয়ক মোহাম্মদ এরশাদ ওরফে নোমান চৌধুরীকে গ্রেপ্তার করেছে র্যা পিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যা ব-১৫)।
কক্সবাজারের উখিয়ার কুতুপালং রোহিঙ্গা শরনার্থীশিবির থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। ২০২২ সালের ১৪ নভেম্বর সীমান্তবর্তী বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম ইউনিয়নের তুমব্রু এলাকায় আরসার সঙ্গে গুলিযুদ্ধে রাষ্ট্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার স্কোয়াড্রন লিডার রিজওয়ান রুশদী নিহত হন।
এ কাণ্ডে নোমান জড়িত। মাদকের টাকার জন্য খুন করা হয় শুক্কুরকে। এজন্য গ্রেপ্তার করা হয়েছে ৫ জনকে। গত ১ অক্টোবর ভোরে শুক্কুর সবজি কেনার জন্য মুন্সিগঞ্জ জেলার সিরাজদিখানের পাউসার গ্রাম হতে ঢাকার শ্যামবাজারের উদ্দেশে রওনা দেন। তার রিকশাটি আমবাগিচা খালপাড়স্থ গেদু মাস্তানের মাজারের সামনে পৌঁছালে ছিনতাইকারীরা
শুক্কুরের শরীরের বিভিন্ন স্থানে ছুরিকাঘাতে তাকে হত্যা করে রাস্তার ওপর ফেলে যায়।
পুলিশ সুপার জানান, আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, তারা সবাই মাদকাসক্ত এবং পেশাদার ছিনতাইকারী। ছিনতাই করা টাকা দিয়ে তারা মাদক সেবন করে । ঘটনার দিন মাদকের টাকা জোগাড় করতে আসামিরা সারারাত ছিনতাই করার জন্য টার্গেট খুঁজছিল। শুক্কুরকে পেয়ে ছুরিকাঘাত করে টাকা ছিনিয়ে নেয়।