ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের নেতৃস্থানীয় অনেকে চাঁদাবাজি, অবৈধ ক্যাসিনো ব্যবসা, অস্ত্র ও মাদক ব্যবসায়ে জড়িত হয়ে গ্রেফতার বা দল থেকে বহিষ্কারের খবর যখন বাসি হয়ে পড়েছে ঠিক তখন যুব মহিলা লীগের একজন নেত্রীর চাঞ্চল্যকর কেলেঙ্কারির খবর দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন গুঞ্জন সৃষ্টি করেছে।
এ দিকে এ ঘটনার পর পাপিয়ার সঙ্গে রাজনৈতিক ও ব্যবসাসহ নানা কারণে সংশ্লিষ্ট থাকায় অনেকেই ফেঁসে যাওয়ার আতঙ্কে রয়েছেন। একান্ত ঘনিষ্ট জনদের অনেকেই গা ঢাকা দেয়ার চেষ্টা করছেন
শামীমা নূর পাপিয়া নামের এ নেত্রী স্বামীসহ বিদেশে যাবার পথে বিমানবন্দরে গত শনিবার রাতে গ্রেফতার হন। গ্রফতারকৃত অন্যরা হলেন-পাপিয়ার স্বামী মফিজুর রহমান ওরফে সুমন চৌধুরী ওরফে মতি সুমন (৩৮), সাবি্বর খন্দকার (২৯) ও শেখ তায়্যিবা (২২)। তাদের কাছ থেকে ৭টি পাসপোর্ট, নগদ দুই লাখ ১২ হাজার ২৭০ টাকা, ২৫ হাজার ৬০০ টাকার জাল মুদ্রা, ১১ হাজার ৯১ ইউএস ডলারসহ বিভিন্ন দেশের মুদ্রা জব্দ করা হয়।
সোমবার জাল টাকা উদ্ধার, অস্ত্র ও মাদকের পৃথক তিন মামলায় নরসিংদী জেলা যুব মহিলা লীগের বহিষ্কৃত সাধারণ সম্পাদক শামীমা নূর পাপিয়া ও তার স্বামী মফিজুর রহমান ওরফে সুমন চৌধুরীকে আদালতে হাজির করা হলে ঢাকা মহানগর হাকিম তাদেরকে তিন মামলায় পাঁচ দিন করে ১৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন। ঢাকা মহানগর হাকিম মাসুদুর রহমান ও মোহাম্মদ জসীম এ রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
এর মধ্যে বিমানবন্দর থানার জাল টাকা উদ্ধারের মামলায় ঢাকা মহানগর হাকিম মাসুদুর রহমান পাঁচ দিন, শেরেবাংলা নগর থানার অস্ত্র ও মাদক আইনে দায়ের করা মামলায় ঢাকা মহানগর হাকিম মোহাম্মদ জসীম পাঁচ দিন করে মোট ১০ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। বিমানবন্দর থানার মামলায় গ্রেফতার চারজন আসামি হলেও শেরেবাংলা নগর থানার মামলার আসামি কেবল পাপিয়া দম্পতি।
অন্যদিকে তিন মামলায়ই রিমান্ড বাতিল করে জামিনের আবেদন করেন আসামি পক্ষের আইনজীবী। আদালত তা মঞ্জুর করেননি। শুনানি শেষে আসামিদের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত।
এদিকে রিমান্ড আবেদনের প্রতিবেদনে পুলিশ উল্লখ করে, পাপিয়াসহ চার আসামি সংঘবদ্ধভাবে অবৈধ অস্ত্র, মাদক ব্যবসা, চোরাচালান, জাল নোটের ব্যবসা, চাঁদাবাজি, তদবির বাণিজ্য, জমি দখল-বেদখল, অনৈতিক ব্যবসার মাধ্যমে বিপুল অর্থ-বিত্তের মালিক হয়েছেন বলে স্বীকার করেছেন। মামলার সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্তের স্বার্থে এবং আসামিদের কাছ থেকে উদ্ধারকৃত বৈদেশিক মুদ্রার উৎস ও জাল টাকা তৈরি চক্রের সক্রিয় সদস্যসহ মূলহোতাকে গ্রেফতার, আসামিদের নিয়ে পুলিশ অভিযান পরিচালনা ও ঘটনার বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পুলিশ রিমান্ড একান্ত প্রয়োজন।
এর আগে গত শনিবার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে দেশত্যাগের সময় পাপিয়াসহ চারজনকে গ্রেফতার করে র্যাব। পাপিয়াকে গ্রেফতারকারী র্যাব কর্মকর্তারা গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, এমন কোন অপকর্ম নেই, যার সঙ্গে এই নেত্রী জড়িত নন। পাঁচ তারকা হোটেলে নারী ও মাদক ব্যবসাই তার আয়ের মূল উৎস। দেশের অভিজাত কিছু ব্যক্তি ও বিদেশিরাই এর গ্রাহক।
ইন্টারনেটে স্কট সার্ভিস খুলে খদ্দেরদের চাহিদামতো সুন্দরী যুবতীদের পাঠাতো পাপিয়া। এ কাজে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে শিক্ষিত সুন্দরী তরুণীদের সংগ্রহ করা হতো।
তাদেরকে অর্থের বিনিময়ে ধণাঢ্য ব্যক্তিদের শয্যাসঙ্গী হিসেবে ব্যবহার করা হতো। পাপিয়া নামে-বেনামে একাধিক অভিজাত হোটেলের রুম ভাড়া নিয়ে এসব অনৈতিক ব্যবসা চালাতো। গ্রেফতারের একদিন পর গত রোববার যুব মহিলা লীগ থেকে পাপিয়াকে আজীবনের জন্য বহিষ্কার করা হয়। পাপিয়ার সব কর্মকা-ের অন্যতম অংশীদার তার স্বামী মফিজুর রহমান চৌধুরী সুমন।
এক সময় নরসিংদী শহর ছাত্রলীগের আহ্বায়ক ছিলেন। পরে নরসিংদীর প্রয়াত পৌর মেয়র লোকমান হোসেনের বডিগার্ড ছিলেন। এদিকে, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের গতকাল সোমবার সচিবালয়ে সমসাময়িক বিষয়ে সাংবাদিকদের ব্রিফকালে বলেছেন বহিষ্কৃত যুব মহিলা লীগ নেত্রী পাপিয়া অপরাধী হিসেবে শাস্তি পাবে। এ সময় কাদের বলেন, সরকারের সায় রয়েছে বলেই, এসব অপরাধী ধরা হচ্ছে। এ বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতি সরকারের নির্দেশনা রয়েছে।
এর আগে দুর্নীতি বিরোধী শুদ্ধি অভিযানের সময় পাপিয়া কেন ধরা পড়েনি সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের উত্তরে সেতুমন্ত্রী বলেন, আমরা জিরো টলারেন্স নীতি অনুসরণ না করলে পাপিয়ারা ধরা পড়তো না। অতীতের সরকারের সময় কোনও অপরাধের দায় দলের এমন পর্যায়ের কেউ আটক হয়েছে-এমন নজির দেখাতে পারবেন না।
অপরাধীদের ধরার ক্ষেত্রে তাদের দুর্বলতা এবং অবহেলা ছিল। যে কারণে অপরাধীরা পার পেয়ে গেছে। কিন্তু বর্তমান সরকার ব্যতিক্রম। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে নির্দেশ দেয়া আছে, দলের ঊর্ধ্বে উঠে অপরাধীকে ধরতে হবে। আর এ কারণেই আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নিরপেক্ষভাবে কাজ করছে।