অসমের রাজ্য ভাষা হিসেবে অসমিয়াকেই স্বীকৃতি প্রদানের জন্যে কেন্দ্রীয় সরকারকে অনুরোধ জানানো হবে। নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন নিয়ে রাজ্যের উত্তপ্ত পরিস্থিতি ঠাণ্ডার জন্যে সিদ্ধান্ত নিতে এক মুহূর্ত দেরি করেনি কিন্তু সরকার।
২১ ডিসেম্বর কেবিনেট বৈঠকে গৃহীত বেশ কয়েকটি সিদ্ধান্তের কথা আত্মবিশ্বাসের সাথে জানিয়ে দিলেন মন্ত্রী ডঃ হিমন্ত বিশ্ব শর্মা।
সব সিদ্ধান্তের মধ্যে বড় সিদ্ধন্তটি গ্রহণ করা হয়েছে ভাষা ও জমি নিয়ে। অর্থাৎ অসমে অসমিয়া ভাষাকে রাজ্যিক ভাষা হিসেবে স্বীকৃতি প্রদানের জন্যে কেন্দ্রের সরকারকে অনুরোধ জানানো হবে। তবে, বরাক উপত্যকা,পার্বত্য অঞ্চল এবং বিটিএডি এলাকায় অসমিয়া সহযোগি ভাষা হিসেবে থাকবে।
অন্যদিকে, বিদ্যালয়ের প্রত্যেক মাধ্যমে দশম শ্রেণী পর্যন্ত অসমিয়া ভাষাকে বাধ্যতামূলক করা হবে।
বিধানসভার আগামি অধিবেশনে এই প্রস্তাব পেশ করা হবে বলে জানিয়েছেন হিমন্ত বিশ্ব শর্মা।
দ্বিতীয়ত আমরা দেখবো যে, কেবিনেট বৈঠকে খুব স্পষ্টভাবে অর্থমন্ত্রী ঘোষণা করেছেন, অসমের খিলঞ্জিয়া তথা ভূমিপুত্রদের জন্যে ‘খিলঞ্জিয়া ভূমি অধিকার আইন’ প্রণয়ন করা হবে।
এই আইনে খিলঞ্জিয়ার (অসমিয়ার) জায়গা-জমি খিলঞ্জিয়া ছাড়া অন্য কারো ক্রয় করার অধিকার থাকবে না। খিলঞ্জিয়ার জমি কিনতে পারবে শুধু খিলঞ্জিয়ারাই! অসমের বাইরের যে কোন ব্যক্তিকে অসমে জমি কেনা থেকে সম্পূর্ণভাবে বের করা হবে এই আইনের মাধ্যমে।
এবং এই নয়া আইন অনুযায়ী, সত্রের জমিজমাও বিক্রি করা যাবে না।
মূল ঘটনা হল, অসমে এনআরসি এবং নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন পাশ হওয়ার পর উত্তর পূর্বের মানুষ এখন সাংঘাতিক আশংকায় ভুগছে।
তাঁদের ভয় হলো, বাংলাদেশ, আফগানিস্তান, পাকিস্তান থেকে যারা ধর্মীয় নির্যাতনের শিকার হয়ে ভারতে এসেছে অর্থাৎ হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান, জৈন, শিখ ধর্মাবলম্বীদের নাগরিকত্ব প্রদান করা হবে! এরপরেই তাঁরা পাকাপাকিভাবে এদেশে বসবাস করতে পারবেন। এবং জনগণের আশংকা যে, উত্তর-পূর্বাঞ্চলের মানুষের রুটি-রোজগারে টান পড়বে।
তাঁরা ভাবছে, কেন তাঁদের বাপ ঠাকুর্দার ভিটেতে নিশ্চিন্তের জায়গা করে নেবেন ভিন দেশ থেকে আসা ধর্মীয় সংখ্যালঘুরা?
এই নিয়ে ভূমিপুত্ররা শংকিত।
এমন পরিস্থিতিকে হাতের মুঠে আনার জন্যে কেবিনেট বৈঠকে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তটি নিয়েই নিল সরকার। ভোট ব্যাংক বাঁচাতে বিজেপির মরিয়া প্রচেষ্টা। এমনটাই মনে করছে রাজনৈতিক মহলগুলো।
অন্যদিকে, বৈঠকে ঘোষিত হয়েছে, ব্রহ্মপুত্র উপত্যকার চা-শ্রমিকদের মজুরি ১২৭ টাকা বাড়িয়ে ১৬৭ টাকা করা হবে।
এবং বরাক উপত্যকায় চা-শ্রমিকদের দৈনিক মজুরি ১১৫ টাকা থেকে ১৪৫ করা হবে।
এছাড়া চা জনগোষ্ঠীকে শিক্ষিত করে তোলার জন্যে চা-বাগান এলাকায় মোট ১০০ নতুন বিদ্যালয় নির্মাণ করা হবে।
সাধারণ মহাবিদ্যালয় এবং বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে আদিবাসী জনগোষ্ঠীর আসন সংরক্ষিত থাকবে। মেধার জোর না থাকলেও সংরক্ষণের জোরে ভর্তির সুযোগ পেয়ে যাবে অনায়াসেই তারা।