অসমের যোরহাটে ভারতীয় সেনা স্টেশনস্থিত কেন্দ্রীয় বিদ্যালয়ে যাওয়া অধিকাংশ মানুষই সেখানে প্রদর্শন করে রাখা ঐতিহাসিক রণ-পাখি এমআই ৪ হেলিকাপ্টারটি দেখতে ভুলে যান। হয়তোবা অনেকে জানেনও না এর ইতিহাস।
স্থানীয় লোকজনের চোখ এড়িয়ে গেলেও ১৯৭১ সালের ভারত-পাক যুদ্ধের সৈনিকরা এই কাপ্টারকে অত্যন্ত সম্ভ্রম ও গৌরবের দৃষ্টিতে দেখেন।
১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর যোরহাটে প্রদর্শিত এই রণ-পক্ষীর পিঠে উঠেই (Eastern Command from Jessore ) যশোর (বর্তমান পশ্চিম বাংলাদেশ) থেকে ঢাকায় গিয়েছিলেন ভারতীয় সেনার ইষ্টার্ণ কমাণ্ডোর তৎকালীন জেনারেল অফিসার কমাণ্ডিং ইন চিফ লেফটেনেন্ট জেনারেল জগজিৎ সিং অরোরা।
এমআই ৪ হেলিকাপ্টারে যশোর থেকে ঢাকা পর্যন্ত ৮৪ নটিকেল মাইলের এই উড়ানে ১৯৭১ সালের ভারত-পাক যুদ্ধের নাটকীয় সমাপ্তি ঘটিয়েছিল।
বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকায় এই রণ-পক্ষী থেকে অবতরণ করেই রমনা রেসকোর্সের ঐতিহাসিক আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানে লেফটেনেন্ট জেনারেল অরোরা সিধা যাত্রা আরম্ভ করেছিলেন।
৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর তারিখে ভারতীয় সময়ানুসারে বিকেল ৪.৩১ মিনিটে লেফটেনেন্ট জেনারেল জগজিৎ সিং অরোরা এবং পাকিস্তানি সেনার ইষ্টার্ণ কমাণ্ডোর লেফটেনেন্ট জেনারেল এ এ কে নিয়াজির মাঝে আত্মসমর্পণ নথি স্বাক্ষরিত হয়েছিল।
সেই ঐতিহাসিক আত্মসমর্পণ নথিই বাংলাদেশের রূপে পূর্ব পাকিস্তানের স্বাধীনতা নিশ্চিত করেছিল।
অগুণতি মানুষের পাকিস্তান বিরোধী স্লোগানে রেসকোর্স উত্তাল হয়ে উঠেছিল এবং লেফটেনেন্ট জেনারেল নিয়াজিকে উত্তেজিত জনতা হত্যার জন্যে উন্মাদ হয়ে উঠেছিল, পাকিস্তানি আধিকারিকদের একটি বাহনে তৎক্ষণাৎ সরিয়ে দেয়া হয়েছিল সে স্থান থেকে।
পাকিস্তানের আত্মসমর্পণের পর ভারতীয় সেনা প্রায় ৯৩ হাজার পাকিস্তানি সৈনিককে যুদ্ধবন্দী করেছিল। এবং এটি পরিণত হয়েছিল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর সৰ্ববৃহৎ আত্মসমৰ্পণে।
লেফটেনেণ্ট জেনারেল নিয়াজির সঙ্গে আত্মসমৰ্পণ করা অন্যান্য জ্যেষ্ঠ আধিকারিকদের মধ্যে ছিলেন রিয়ের এডমিরেল মোঃ শরিফ, এয়ার কমান্ডো ইনামুল হক, মেজর জেনারেল রাও ফার্মান আলি এবং গভর্নর জেনারেল মতালেব মালিক।
১৯৭১ সালের ভারত-পাক যুদ্ধের সময় এমআই ৪ হেলিকপ্টার ৪ অভিযান এবং পরিবহন দুটো কাজেই ব্যবহৃত হতো।
ভারতীয় বায়ু সেনা বাহিনীতে এমআই ৪ অভিষেক ঘটেছিল ১৯৬১ সালে।
পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যুদ্ধজয়ের ট্রফিরূপে যোরহাটের কেন্দ্রিয় বিদ্যালয়ের প্রতিজন শিক্ষার্থীর পাশাপাশি অসমবাসীরও এই হেলিকাপ্টারকে নিয়ে গৌরবান্বিত হওয়া উচিত।
কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে আজ বহু বছর ধরে এই ঐতিহাসিক রণ-পক্ষী রয়ে গেছে অসমবাসীর চোখের আড়ালে!
লেখকঃ অনির্বাণ রায়
প্রকাশকঃ সাগরিকা দাস