ধর্মান্ধতা মানুষকে কোথায় নিয়ে যায়, তার প্রত্যক্ষদর্শী হলো আরো একবার ভারত।
করোনা সংক্রমণের প্রশ্নে দিল্লির নিজামুদ্দিন এলাকার ‘তাবলিগ জামাত’ ভারতের স্বাস্থ্য মন্ত্রকের ঘুম কেড়ে নিয়েছে।
নিজামুদ্দিনে অংশ নিয়েছিলেন ভারতের বিভিন্ন স্থানের প্রচুর মানুষ। গোষ্ঠী সংক্রমণ শুরু হওয়ার আশঙ্কায় ভারতজুড়ে এই তাবলিগ জামাতে অংশগ্রহণকারীদের খুঁজে বের করে আইসোলেশনে পাঠাতে রাজ্য সরকারগুলিকে কেন্দ্রীয় সরকার বিশেষ নির্দেশ পাঠিয়েছে। বিদেশ থেকে আসা ইসলামি ধর্মপ্রচারকদের চিহ্নিত করতে বলা হয়েছে।
ভারতবাসীর ঘুম কেড়ে নিয়েছে এই নিজামুদ্দিন।
এ বিষয়ে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ মন্তব্য রেখেছেন বাংলাদেশের নির্বাসিত লেখক তসলিমা নাসরিন।
“তাবলিগ জামাত একটা গন্ডমূর্খদের আন্দোলন।১৯২৬ সালে হরিয়ানার মিয়াট অঞ্চলে মোহাম্মদ ইলিয়াস নামের এক লোক একে জন্ম দেয়। ভারতে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় মাদ্রাসা দেওবন্দের জন্ম। ভারতে আহমদিয়া ধর্মের জন্ম। ইসলামের প্রসারে ভারতের ভূমিকা বিরাট।
তাবলিগ জামাত এখন পৃথিবীতে এত ছড়িয়ে গেছে যে ১৫০ টা দেশ থেকে প্রায় কয়েক কোটি লোক এতে অংশ নেয়। ফেব্রুয়ারীর ২৭ তারিখে ৪ দিন ব্যাপী তাবলিগ জামাতের সম্মেলন হলো মালয়েশিয়ায়। ১৬০০০ লোক অংশগ্রহণ করেছিল। ১৫০০ ছিল বিদেশি। চীন থেকে, দক্ষিণ কোরিয়া থেকে আসা। মালয়েশিয়ার দুই তৃতীয়াংশ করোনা রোগীর ভাইরাস এসেছে ওই তাবলিগ জামাত থেকে।
এই খবর গুলো চারদিকে প্রচার হওয়ার পরও তাবলিগ জামাত দিল্লিতে সম্মেলন করার অনুমতি পেয়ে যায় কী করে জানিনা। এখন দিল্লিতে নানান দেশের তাবলিগি গুলো ভাইরাস ছড়িয়েছে। কত হাজার লোককে যে ওরা সংক্রামিত করেছে তার কোনও হিসেব আছে?! গন্ডমূর্খগুলো কি জানে না করোনার কারণে সারা বিশ্বের মানুষ গণহারে মারা পড়ছে, তাদের কি জমায়েত বন্ধ করা উচিত ছিল না? সামান্য মানবতাবোধও ধর্মান্ধ লোকদের মধ্যে নেই।
সৌদি আরবকে স্যালুট দিই। আল্লাহর ঘর কাবা বন্ধ করে দিতে এতটুকু দ্বিধা করেনি। উমরাহ বন্ধ করেছে। নবীর রওজা শরিফ দর্শন বন্ধ করেছে, মসজিদ বন্ধ করেছে। ভারতে এখনও অনেক মসজিদ খোলা। লোকেরা নামাজ পড়তে ভিড় করে। লকডাউন মানছে না, সোশ্যাল ডিস্ট্যান্সিং মানছে না। ভারতের একটুখানি সৌদি আরবের মতো হওয়া দরকার।
বাই দ্য ওয়ে, উজবেকিস্তান, কাজাকস্তান, তাজিকিস্তান — এই দেশগুলোয় কিন্তু তাবলিগ জামাত নিষিদ্ধ । তাবলিগ হাদিস কোরান যেভাবে বলে, সেভাবে চলে। ১৪০০ বছর আগে মোহাম্মদ যেভাবে জীবন যাপন করত, সেভাবে জীবন যাপন করে। আক্ষরিক অর্থেই মৌলবাদি।
যে দেশ আধুনিক হতে চায় বা সভ্য হতে চায়, সে দেশ মৌলবাদী আন্দোলনকে প্রশ্রয় দেয় না। আল কায়দার মতো সন্ত্রাসী দল তাবলিগের আইডি ব্যবহার করে সন্ত্রাসের উদ্দেশে এক দেশ থেকে আরেক দেশে ভ্রমণ করেছে। এই ধর্মান্ধ গোষ্ঠী কি সমাজের কোনও উপকার করছে? প্রগতির বিরুদ্ধে গিয়ে সমাজকে পেছনে টেনে রাখলে উপকার নয়, অপকার হয় মানুষের। যত্র তত্র ভাইরাস ছড়িয়ে কত নিরীহ মানুষের মৃত্যুর কারণ হয়েছে। কী ভয়ংকর অপকারই না ওরা করলো মানবজাতির!
ধর্ম মানুষকে স্বার্থপর, নিষ্ঠুর, হিংসুক বানায়, খুব বোকাও বানায়। না হয় বুঝলাম ওরা বোকা। সরকার কী করে শুরু থেকে বিমান যাত্রা চালু রেখেছিল, সেই সব দেশেও দিব্যি বিমান যাওয়া আসা করেছে যেসব দেশে ভাইরাস দাবানলের মতো ছড়িয়ে পড়েছে। সময়মতো উচিত কাজটি করা হয়নি বলে শত শত তাজা জীবন আজ অকালে ঝরে পড়ছে।”
উল্লেখযোগ্য যে, দিল্লি পুলিশ জানিয়েছে, করোনা সংক্রমণের আবহেই মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, সৌদি আরব, কিরঘিজস্তান থেকে বিদেশিরা এসেছিলেন। বাংলাদেশ থেকেও বেশ কয়েকজন যোগ দিয়েছিলেন। কিন্তু মূল জমায়েত শেষ হওয়ার পরেও নিজামউদ্দিন এলাকাতেই থেকে গিয়েছিলেন কয়েক হাজার । ২১ মার্চ ওই মসজিদে ছিলেন ১৭৪৬ জন। যাঁদের মধ্যে ২১৬ জন বিদেশি। আর গোটা দেশে সেই সময়ে বিদেশ থেকে আসা মুসলিম ধর্মপ্রচারক ছিলেন ৮২৪ জন।
পর্যটক ভিসা নিয়ে ভারতে এসে ধর্ম প্রচারে অংশ নেয়া প্রচারকদের বিরুদ্ধে কঠোর হচ্ছে ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক।
রাষ্ট্র মন্ত্রকের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, তাবলিগ জামায়েতে অংশ নেওয়াদের মধ্যে তামিলনাডুতে ৫০ জনের, দিল্লিতে ২৪ জনের, তেলেঙ্গানার ২১ জনের, আন্দামাওেনর ১০ জনের এবং আসাম ও জম্মু-কাশ্মীরের ১জনের শরীওে করোনা সংক্রমন শনাক্ত হয়েছে।
তথ্য এখানেই সমাপ্ত নয়, অসমের বিভিন্ন জেলা থেকে প্রায় ৪০০ রও বেশি মানুষ যোগদান করেছেন উক্ত অনুষ্ঠানে!
এর মধ্যে মার্ঘেরিটার রয়েছেন ৬ জন। তিনসুকিয়ারও রয়েছেন ১০ রও অধিক মানুষ!
এমন ভয়ানক ঘটনা ভারতকে প্রবল বিপদের মুখে ঠেলে দিয়েছে।
সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ হলো, যারা নিজামুদ্দিন থেকে অসমে ফিরে এসেছেন, তাঁরা কিন্তু রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে বারংবার সতর্ক করে দেওয়ার পরও জেলা প্রশাসন অথবা হেল্পলাইন নম্বরে যোগাযোগ করেননি! সারা বিশ্ব যখন মাথা নত করে ফেলেছে এই ক্ষুদ্র অথচ শক্তিশালী ভাইরাসের কাছে, তখন ধর্মান্ধ মানুষের কাছে নিজের প্রাণের চেয়ে, পরিবারের চেয়ে, দেশের চেয়ে বড় হয়ে উঠেছে ধর্ম করা!
ভারত করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে ঠিকই , কিন্তু তার আগেই চিন, ইটালি প্রায় ধ্বংসের মুখে পতিত হয়েছে। এমন তো নয় যে, ভারতের ধর্মান্ধদের মস্তিষ্কে করোনা সতর্কতার বাণী পৌঁছায়নি!
উত্তর-পূর্বাঞ্চলের অসমের মানুষ আজ ভীষণভাবে শংকিত হয়ে পড়েছেন দিল্লির ঘটনায়।
শনাক্ত করে কয়েকজনের নমুনা করোনা টেস্ট সেন্টারগুলোতে প্রেরণ করা হয়েছে। খুব সম্ভবত আজ বুধবারই ফলাফল হাতে আসতে পারে।
সমগ্র অসমবাসী তথা দেশবাসীকে অনুরোধ জানানো হচ্ছে রাজ্য স্বাস্থ্য বিভাগের পক্ষ থেকে, প্রত্যেকে যেন দূরত্ব বজায় রেখে সতর্কতা অবলম্বন করে চলেন।
এ মুহূর্তে আরো একটি বড় খবর, নিজামুদ্দিনে অংশ নেয়া ৪৩ জনের শরীরে করোনা পজিটিভ ধরা পড়েছে। তাঁরা প্রত্যেকেই অন্ধ্রপ্রদেশের মানুষ!