স্বচ্ছতার পর এবার পানীয় জলের সমস্যা এবং এর সরক্ষণের বিষয়কে জাতীয় ভাবে উত্থাপন করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।
কিন্তু এরই মধ্যে হাইলাকান্দিতে দেখা দিয়েছে বিশুদ্ধ পানীয় জলের জন্য হাহাকার। জেলার উত্তর থেকে দক্ষিণে সর্বত্র পানীয় জলের সঙ্কট দেখা দিয়েছে। কিন্তু এরপরেও নির্বিকার হাইলাকান্দি প্রশাসন ও জনস্বাস্থ্য কারিগরী বিভাগ।
এই তীব্র জলসংকটের জন্য বিভাগীয় গাফিলতিকে দায়ি করে আন্দোলনের হুমকি কৃষক মুক্তি সংগ্রাম সমিতির।
হাইলাকান্দি জেলায় জনস্বাস্থ্য ও কারিগরী বিভাগ গত এক দশকে কার্যত রেকর্ড সংখ্যক পানীয় জল প্রকল্প নিমার্ণ করেছিল। বিশেষ করে রাজ্যে গত কংগ্রেস শাসনে গৌতম রায় জনস্বাস্থ্য ও কারিগরী বিভাগের মন্ত্রী থাকাকালে প্রয়োজনে-নিষ্প্রয়োজনে, কারণে-অকারণে প্রচুর পরিমাণ পানীয় জল প্রকল্প মঞ্জুর করিয়েছিলেন। এসব প্রকল্পের জন্য কয়েক কোটি বরাদ্দ হয়েছিল। মন্ত্রীর ঘনিষ্টবৃন্তদেরই অধিকাংশই কাজের বরাত জুটেছিল। প্রতিটি শহর-গ্রাম-পাহাড়-সমতল সর্বত্রই মঞ্জুর হয়েছিল পানীয় জল প্রকল্পের। নয়া নয়া জল প্রকল্প জেলার সর্বত্র শোভাবর্ধন করেছিল। বলতে গেলে জেলায় রীতিমতো বিপ্লব এসেছিল জনস্বাস্থ্য ও কারিগরী বিভাগের এহেন কর্মযজ্ঞে।
কিন্তু চোখ কপালে উঠার মতো ঘটনা হলো যে, বর্তমানে জেলার আশি শতাংশের বেশি পানীয় জল প্রকল্প হয়তো মুখ থুবড়ে নতুবা পুরোটাই বন্ধ। জেলার সর্বত্র চলছে বিশুদ্ধ পানীয় জলের হাহাকার। তবে জল সরবরাহ প্রকল্পগুলো সচল করার ব্যাপারে কার্যত চূড়ান্ত উদাসীনতায় বিভাগীয় কর্তৃপক্ষ। জেলা প্রশাসনও হাতগুটিয়ে। ফলে বিশুদ্ধ পানীয় জল পান না করেই জীবন নির্বাহ করছেন জেলার বহু গ্রামের মানুষ।
তবে জনস্বাস্থ্য ও কারিগরী বিভাগের চরম উদাসীনতাকে দায়ী করে এবার বৃহত্তর আন্দোলনে নামছে কৃষক মুক্তি সংগ্রাম সমিতি (কেএমএসএস)।
এই সংগঠনের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক জহির উদ্দিন লস্কর এক সংবাদমাধ্যমে অভিযোগের সুরে জানিয়েছেন, হাইলাকান্দি জেলার আশি থেকে নব্বই শতাংশ পানীয় জল সরবরাহ প্রকল্প বন্ধ। জেলার সর্বত্র জলের হাহাকার।
এর কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে জহির উদ্দিন লস্কর বলেছেন, কংগ্রেস শাসনে গৌতম রায় জনস্বাস্থ্য ও কারিগরী বিভাগের মন্ত্রী থাকাকালে অবাধে, দু-হাত ভরে পানীয় জল সরবরাহ প্রকল্প মঞ্জুর করেছিলেন। একেকটি গ্রামে একাধিক প্রকল্প স্থাপন করা হয়েছিল।
কিন্তু সিংহভাগ জল সরবরাহ প্রকল্পই দিনের আলো দেখে নি বলে অভিযোগ এনে তিনি বলেন, একেকটি প্রকল্প চালু হওয়ার মাস কয়েকের মধ্যেই বন্ধ হয়ে যায়। আবার একাংশ জ্বালানি তেলের জন্য বন্ধ হয়েছে, একাংশ প্রকল্পে সঠিকভাবে পাইপ লাইন বসানো হয় নি। আবার একাংশ প্রকল্পে কারিগরী সমস্যা দেখা দেওয়ায় বন্ধ হয়েছে।
জহিরবাবু বলেন, গৌতম রায় মন্ত্রী থাকাকালে যতটি পানীয় জল সরবরাহ প্রকল্প হাইলাকান্দি জেলায় স্থাপন করা হয়েছিল সবকয়টিতেই দুর্নীতির চোরাস্রোত বইছিল। একেকটি প্রকল্পে মোটা অঙ্কের টাকা ব্যয় হয়েছিল শুধুমাত্র গৌতম রায়ের ঘনিষ্ঠদের ঠিকাদারি ব্যবসা চাঙ্গা করা সহ দলীয় নেতা-কর্মীদের সন্তুষ্ট রাখতে। বিভাগের সব ধরনের বাস্তুকার-কর্মীদের এবং দলীয় নেতা-কর্মীদের যোগসাজশে জেলার একটিও জল সরবরাহ প্রকল্পের কাজ সুচারুরূপে না হয়ে হরিরলুট হয়েছে। কোনো প্রকল্প একশো শতাংশ নির্মাণ করা হয় নি, জল প্রকল্প নিমার্ণের নামে অর্থ বরাদ্দ হয়ে এই টাকা পকেটস্ত হয়েছে একাংশ দালাল, ঠিকাদার সহ বিভাগের একাংশ দুর্নীতিগ্রস্ত আধিকারিক-বাস্তুকারের, এমন ঘোরতর অভিযোগ আনেন কৃষক নেতা জহির উদ্দিন লস্কর।
আর এসব দুর্নীতিগ্রস্ত ঠিকাদার, বিভাগীয় একাংশ বাস্তুকারদের মিতালিতে বিশুদ্ধ পানীয় জলের হাহাকার সৃষ্টি হয়েছে জেলায়।
এই বিভাগের একাংশ কনিষ্ঠ বাস্তুকার, সহকারী বাস্তুকার দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে হাইলাকান্দি জেলায় কাজ করে রীতিমতো মৌরুসি পাট্টা বানিয়ে নিয়েছেন বলে অভিযোগ এনে জহির বলেন, মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সনোয়ালের “শূণ্য সহনশীল নীতি” হাইলাকান্দির পিএইচই বিভাগে বাস্তুকারদের জন্য কার্যকর নয়।
কেএমএসএস নেতা জহির উদ্দিন লস্কর জানিয়েছেন, কংগ্রেস শাসনে হাইলাকান্দি জেলার জনস্বাস্থ্য ও কারিগরী বিভাগের জল সরবরাহ প্রকল্প নিমার্ণের নামে লাগামহীন দুর্নীতি, নিম্নমানের প্রকল্প নিমার্ণ প্রভৃতি তদন্তের দাবিতে শীঘ্রই মুখ্যমন্ত্রীর দ্বারস্থ হবে তাদের সংগঠন। এছাড়া মুখ্যমন্ত্রী ভিজিল্যান্স সেলে চিঠি লিখে জনস্বাস্থ্য ও কারিগরী বিভাগের দুর্নীতির তদন্ত দাবি জানাবেন।
তবে এর আগে হাইলাকান্দি জেলার প্রতিটি গ্রামে বিশুদ্ধ পানীয় জলের ব্যবস্থা সহ মুখ থুবড়ে পড়ে থাকা জল সরবরাহ প্রকল্পগুলো শীঘ্রই চালু করার দাবিতে ৯ জুলাই হাইলাকান্দির জনস্বাস্থ্য ও কারিগরী বিভাগের কার্যবাহী বাস্তুকারের কার্যালয়ের সামনে ধর্ণা প্রদর্শন করবে কৃষক মুক্তি সংগ্রাম সমিতি, জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক জহির উদ্দিন লস্কর।