মাসের পর মাস ধরে বন্ধ চা শ্রমিকদের রেশন, নেই কর্মচারীদের তলব, পাচ্ছেন না গ্রেচুয়েটির টাকা । দুর্বিসহ জীবন যন্ত্রনায় ক্রেকপার্কের পর কালাইনচড়া বাগানের শ্রমিক, কর্মচারীদের মধ্যে ক্ষোভের পারদ চড়ছে ।
সবকা সাথ ,সবকা বিকাশ’ স্লোগানে পরিবর্তনকামী সরকারের জমানায়ও পরিবর্তন আসেনি কাটিগড়ার চা- বাগিচা গুলিতে । একের পর এক বাগানে বাড়ছে নানা সমস্যা । দুশ্চিন্তায় চা বাগিচার শ্রমিকরা ।
কাছাড়ের কাটিগড়া সমষ্টির ক্রেগপার্ক, কালাইনচড়া চা বাগানের শ্রমিক কর্মচারীরা দীর্ঘদিন থেকে নানাবিধ সমস্যার মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন ।
সম্প্রতি সংবাদ মাধ্যমের কাছে আসাম-মেঘালয় সীমান্ত লগোয়া কালাইনছড়া বাগানের শ্রমিক – কর্মচারীরা তুলে ধরেন তাদের দুর্বিসহ জীবন যাপনের সাতকাহন। কর্মচারীদের পক্ষে জোতির্ময় চক্রবর্তী,দিপেন্দ্র পুরকায়স্থ,বাদল ভুমিজ ,শ্রমিকদের পক্ষে সজল গোসাই সহ অন্যান্যরা জানান,গত বছরের জুলাই মাস থেকে তাদের মাসোয়ারা বন্ধ। রেসন বন্ধ রয়েছে গত ৮ মাস থেকে ফলে স্ত্রী সন্তান নিয়ে এক দুর্বিসহ পরিস্থিতিতে রয়েছেন তারা।
দিপেন্দ্র পুরকায়স্থের ভাষায়,কোম্পানীর কাছে তার বকেয়া বাবদ পড়ে রয়েছে দু লক্ষাধীক টাকা, বহুদিনের টাকা জমা রয়েছে ভ্রমন ভাতা বাবদও কিন্তু তার কন্যার বিএড এ ভর্তীর জন্য মাত্র ২৫ হাজার টাকা চেয়ে পান নি । যার ফলে তার কন্যার আর বিএড পড়া আর হল না। একপ্রকার বাধ্য হয়ে মেয়ের পড়শুনা বন্ধ রাখতে হয়েছে ।
শুধু এখানেই শেষ নয়,বাগান কতৃপক্ষের এমন চরম অমানবিকতায় বাগানের অনেক শিশুই শিক্ষা সহ বিভিন্ন মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে । আরেক কর্মচারী বাদল ভূমিজ বাগান মালিক অজয় পাকুলিয়ার উপর একরাশ ক্ষোভ উগরে দিয়ে জানান মালিকের গাফিলতিতেই তাদের এই করুন পরিনতি। অবসর নিলে ও গ্রেচুয়েটির একটি টাকা ও পাননি তিনি।
শুধু তিনি নয়,দীর্ঘ ১৮ বছর থেকে বন্ধ গ্রেচুয়েটির টাকা ফলে গ্রেচুয়েটি বঞ্চিতদের তালিকা ও বেশ দীর্ঘ। এই তালিকায় রয়েছেন অনুমানিক ৩০০ জন। ভ্রমন ভাতা বন্ধ রয়েছে ২০১৩ সাল থেকে। বসবাস যোগ্য নয় শ্রমিকদের বাসগৃহ থেকে কর্মচারীদের কোয়াটার। মাথার উপর পলিথিন অতবা ত্রিপল দিয়ে জোড়াতালি দিয়ে নিশি যাপন করা হচ্ছে।
জানান ভারতীয় চা কর্মচারী ইউ নিয়নের ইউনিট সেক্রেটারী জোতির্ময় চক্রবর্তী। বার কয়েক কাছাড়ের জেলা শাসকের কাছে তাদের বকেয়া সহ সব দাবী মিটিয়ে দেবার লিখিত প্রতিশ্রুতি দিয়ে ও কোন কাজে আসেনি। এখনও চলছে দাবিদাওয়া দিয়ে টালবাহানা ।
অথচ এমন প্রতারনার বিরুদ্ধে জেলা প্রশাসন তরফে মালিকের বিরোদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেওয়া হয় নি বলে জানান তারা। শ্রমিকদের পক্ষে ক্ষীরোদা ভুমিজ,বাগান পঞ্চায়েত সজল গোসাইর, চা-শ্রমিক ফুলেশ্বরি ভুমিজ, দূর্গামণী, শিবচরন কর্মকাররা জানান,তলব চললে ও রেসন বন্ধ ৮ সপ্তাহ থেকে ।
ফলে চরম দুর্ভোগে রাত্র যাপন করছেন তারা। এদিকে তাদের থাকার যে আবাসন রয়েছে সেগুলোর অবস্থা সংকট জনক। কখন জানি ভেঙ্গে পড়ে প্রান হানির মত ঘটনা ঘটে সেই আশংকা তারা করছে তাদের। মুলত কাছাড়ের প্রায় অধিকাংশ চা বাগিছার করুণ অবস্থা । সুতরাং পরিবর্তনকামী সরকারের সুদৃষ্টির প্রয়োজন রয়েছে,অন্যথায় অচিরেই চা-শিল্প ভেস্তে যেতে পারে।