আশঙ্কার মেঘ জমছিল পূর্ব থেকেই। এভাবে যে শারদীয়ার প্রস্তুতির প্রাক মুহূর্তে ব্যবসা হোঁচট খাবে তা ব্যবসায়ীরা পূর্বেই আঁচ করেছিলেন।
এনআরসি আতংক তথা রাষ্ট্রহীন হওয়ার ভয় মানুষের সমস্ত আনন্দ কেড়ে নিয়েছে। কোন পরিবারে নাগরিক তালিকায় নাম অন্তর্ভুক্ত না হওয়া বাবা আত্মহত্যা করেছে, কোন পরিবারে মা! আনন্দ চোখের অশ্রুতে পরিণত হয়েছে। পাশাপাশি বৃষ্টির তাণ্ডব তো চলছেই।
এছাড়া, বিক্ষিপ্তভাবে অসমে বর্ষার ঘনঘটা মেজাজ বিগড়ে দিয়েছে। ব্যাহত হচ্ছে পুজোর প্যাণ্ডেলের প্রস্তুতি।
তিনসুকিয়ায় বুধবার কিছুটা আকাশ পরিষ্কার হলেও গুয়াহাটির আকাশ আজকে পর্যন্ত মেঘলাই দেখা যাচ্ছে। গুয়াহাটি লতাশিলে মণ্ডপ তৈরির শিল্পীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আকাশের এমন ভারমুখে তাঁরা কাজ করে কিছুতেই স্বস্তি পাচ্ছেন না। মহালয়ার পূর্বে ঘন কালো আকাশে বিভ্রান্ত হয়ে পড়েছে মানুষ।
শিল্পীর পাশাপাশি স্বাভাবিকভাবেই পুজো উদ্যোক্তাদের মনেও মেঘ জমেছে। হাতে আর দশদিনও নেই। মণ্ডপে মণ্ডপে চলছে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি। শিল্পীর ব্যস্ততার সাথে তাল মিলিয়ে যেন বাড়ছে আকাশে কালো রং।
মহানগর গুয়াহাটির পুজোর বাজারও মন্দা চলছে। স্থানীয় ফাঁসি বাজারের একাংশ দোকানই এদিন দেখা গেল ফাঁকা। ব্যবসায়ী দিলীপ ভৌমিকের সঙ্গে বার্তালাপ হয়েছে ক্ষাণিকটা সময়। তিনি জানালেন, “একদিকে বৃষ্টি অপরদিকে অসমের এনআরসি পুজোর বাজার একেবারে শেষ করে দিয়েছে। ক্রেতাদের হাঁক দিয়েও পাওয়া যাচ্ছে না।”
তিনসুকিয়ার ব্যবসায়ীদের কাছে থেকে শোনা গেল মর্মান্তিক সত্যটা। ‘নর্থ ইস্ট নাও’ কে তাঁরা জানিয়েছেন, “বছরের সবচাইতে আনন্দের দিন শারদীয়া দুর্গা পুজো। যে যে মুল্লুকেই থাকুক না কেন, ছুটে আসে হাসি মুখে পরিবারের সঙ্গে সাক্ষাতের জন্যে। কিন্তু এবার অসমের এনআরসি সব আনন্দ কেড়ে নিয়েছে। মানুষ কেবল বাঁচার জন্যে বেঁচে আছে। বিলাসিতা নয়, কাপড়-কসমেটিকস নয়। মানুষের ভিড় বরাবরের মতো চাল-ডালের দোকানে।”
এই প্রসঙ্গে সুকান্ত ভট্টাচার্যের সেই বিখ্যাত উক্তিটি মনে পড়ে যাচ্ছে, ‘পূর্ণিমার চাঁদ যেন ঝলসানো রুটি’। এখন শুধু লড়াইয়ের সময়। বাঙালিরা রাজনৈতিক দলের দাবার ঘুঁটিতে পরিণত হয়েছে। রীতিমতো তাঁদের ওপর চলছে মানসিক নির্যাতন! বাঙালি চিরদিনই রক্ত দিয়ে আসছে, কিন্তু সে রক্তের দাম নেই। দলের নেতা-নেত্রীরা বাঙালিকে ব্যবহার করছে ভোটব্যাংক হিসেবে। এটাই সত্য।
এদিকে দক্ষিণবঙ্গের পুজোর আকাশও ছেয়ে রয়েছে কালো মেঘে। দক্ষিণ অন্ধ্রপ্রদেশের উপর একটি ঘূর্ণাবর্ত রয়েছে। সেখান থেকে একটি নিম্নচাপ অক্ষরেখা দক্ষিণবঙ্গ হয়ে বাংলাদেশের আকাশে মিশেছে বলে হাওয়া অফিস সূত্রে জানা গেছে।
পরিণামস্বরূপ কলকাতা-সহ দক্ষিণবঙ্গের বিভিন্ন জেলায় প্রবল বর্ষণের আশঙ্কা জোরদার হয়ে উঠেছে।
মঙ্গলবার দুপুর থেকেই একনাগাড়ে বৃষ্টি হয়েছে কলকাতা এবং লাগোয়া জেলাগুলোতে। ক্ষণে ক্ষণে বৃষ্টি। সন্ধ্যা পর্যন্ত আলিপুরে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ৫৪ মিলিমিটার।
তবে আজ বুধবার দিনভর আকাশ মেঘলা থাকলেও বৃহস্পতিবার আকাশ পরিষ্কার হবার সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানিয়েছে আলিপুর আবহাওয়া দফতর।