কষ্ট স্বীকার করে জীবনে যে সন্তানকে লালন-পালন করলেন সেই সন্তানই আজ তাঁকে ঘরছাড়া করলেন।
হ্যাঁ এমনই এক বেদনাদায়ক ঘটনা ঘটেছে অসমের করিমগঞ্জ জেলার বদরপুরে।
দুই ছেলে সরকারি চাকুরে ও এক ছেলে ব্যবসায়ী। ছেলে সবাই ভালো রোজগেরে, এরপরেও আশি উর্দ্ধ লক্ষী সেনের ঠিকানা বদরপুর রেল স্টেশন।
জানা গিয়েছে, বদরপুর রেল স্কুলের পিছনে বসত বাড়ি ছিল লক্ষী সেনের। তাঁর ছেলেরা সেই জায়গা বিক্রি করে জুমবস্তিতে আরেকটি জায়গা নেয়। কথা ছিল সেখানেই বাড়ি তৈরি করে মাকে রাখবে।
কিন্তু ভাগ্যের পরিহাস, আগে জমি এখন বাড়ি হারা হয়ে লক্ষীদেবীর ঠাঁই হলো রেল স্টেশনে।
বিগত পাঁচ দিন ধরে বদরপুর রেল স্টেশনের প্লেটফর্মে ঢোকার মুখে এক কোণায় পড়ে রয়েছেন তিনি। সঙ্গে তাঁর ব্যবহৃত আসবাবের একটি ব্যাগ, মোড়া, বালতি আর প্লাস্টিকের একটি চাটাই। এই সম্বলটুকু তাঁর হাতে ধরিয়ে দিয়ে বাড়ির লোকেরা তাঁকে স্টেশনে পৌঁছে দিয়ে গেছে বলে নিজেই জানালেন তিনি।
জানা গিয়েছে, আশির উপরে বয়স লক্ষী সেন মাত্র নয় বছর বয়সে ওপার বাংলার নোয়াখালী রায়টের সময় ঘরবাড়ি ছেড়ে এপারে চলে আসেন।
লক্ষীদেবীর ছোট ছেলের বয়স যখন ৯ ছুঁইছুঁই তখনই তাঁর স্বামী পুষ্প সেন মারা যান। এরপর অনেক ঘাত প্রতিঘাত সহ্য করে সন্তানদের বড় করেছেন। বলতে গেলে, আজ ছেলেরা যে মাটির উপর দাঁড়িয়ে রয়েছে তার পেছনে একমাত্র হাত মা লক্ষীদেবীর।
জানা গেছে, বড় ছেলে শঙ্কর সেন মাইবাঙ পিএইচসিতে বড়বাবু। মেজো ছেলে কৃষ্ণ সেন বদরপুর পিএইচসিতে চাকরি করেন। আর ছোট ছেলে দিলীপ সেন তিনসুকিয়ায় ব্যবসা করেন।
ছেলেদের অবস্থা এতো স্বচ্ছল হওয়ার পরও তাদের সংসারে ঠাঁই হয়নি মা লক্ষীদেবীর।
সোমবার, ছ’দিন থেকে পরে থাকা স্টেশন চত্ত্বরে যাত্রী ও রেল কর্মীদের দয়ায় কোনোমতে দিন কাটাচ্ছেন তিনি।
কবে ছেলেরা মাকে বাড়ি নিয়ে যাবে এ অপেক্ষায় প্রহর গুণছেন অভাগিনী মা লক্ষী সেন।