সভ্য জগতের কী নির্মম চিত্র! বিগত কয়েকদিনে ভারতে পশুহত্যার ঘটনা বৃদ্ধি পেয়েছে। কেরলে আনারসের ভিতর বাজি ভর্তি করে একটি গর্ভবতী হাতিকে নৃশংসভাবে খুন করে মেরেছে দুষ্কৃতিরা। শুধু তাই নয়, এরপরই হিমাচলপ্রদেশে একটি গরুর মুখ চিড়ে দিয়ে রক্তাক্ত করে দেয়া হয়েছে।
অসমের চিত্রটাও ভিন্ন নয়। উত্তর-পূর্বাঞ্চলের এই রাজ্যে গণপ্রহারে হত্যাকাণ্ড বৃদ্ধির পাশাপাশি হচ্ছে পশুহত্যা। গুয়াহাটির ফাটাশিল রিজার্ভ ফরেস্টের কাছে একটি চিতাবাঘকে ধরার জন্যে ফাঁদ পেতে রেখেছিল গ্রামবাসীরা। এরপর বাঘটিকে নৃশংস ভাবে পিটিয়ে মেরে ফেলেছে। উন্মত্ততার শেষ এখানেই নয়, মৃত চিতাবাঘটিকে টুকরো টুকরো করে কেটেছে গ্রামবাসীরা! এরপর মানুষ খেলায় জয়ী হয়ে ট্রফি নিয়ে যেমন উল্লাসে মত্ত হয় ঠিক একই ভঙ্গিমায় মৃত বাঘটিকে নিয়ে নিষ্ঠুর গ্রামবাসীরা করেছে! এই পৈশাচিকতার নমুনা দেখে সারা রাজ্য শিউরে উঠেছে।
ঘটনায় গ্রেফতার করা হয়েছে মোট ৬জন অপরাধীকে। বাকিদের খোঁজ চলছে। তাঁদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে।
এই নৃশংসতার শেষ কোথায়? কবে?
মানুষের মনে ক্রমাগতভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে অসহিষ্ণুতা, হিংসা! কেন এই অসহিষ্ণুতা!
আমেরিকায় এক গবেষণার মাধ্যমে এফবিআই (মার্কিন কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা) যে তথ্য জানিয়েছে, সে বিষয়টি সিন্তা করার মতো। তারা বেশ কিছু ক্রাইমের উপর গবেষণা করে জানতে পারেন যে, প্রায় যে কোনো বড় ধরনের ক্রাইমের সূত্রপাত হয় পশুর উপর নৃশংস হওয়ার অভ্যস্ততা থেকে। তাদের ধারণা, পশুর উপর বর্বরতা বন্ধ করতে পারলেই ভবিষ্যতে মানুষের উপর বর্বরতাকে কমিয়ে আনা সম্ভব। আজকে যে একটা নিরীহ পশু কে অত্যাচার করছে বা মারছে, কাল সে মানুষ মারতে দ্বিধা করবে না। তাই আজকে একজন পশু হত্যাকারী শনাক্তকরণ মানে কালকের একজন মানুষ হত্যাকারীকে শনাক্ত করা।
মানুষ সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ জীব হয়েছে বলেই কী মানুষের মৃত্যুযন্ত্রণা পশুর থেকে বেশি? মৃত্যুভয় যেমন মানুষের রয়েছে, পশুরও তো তাই!
একই রকম বর্বর আরো একটি ঘটনা সংঘটিত হয়েছে বাংলাদেশ নাটোরের বড়াইগ্রামে। আমফানের প্রভাবে বাজিতপুর গ্রামে শামুকখোল পাখিগুলো টাল সামলাতে না পেরে নীচে পড়তে থাকে। ঝড়ের ঝাপ্টা পাখিগুলোকে কাবু করে ফেলেছিল। প্রায় ২০০ পাখি মাটিতে পড়ে ডানা ঝাপটাতে থাকে। গ্রামবাসীরা কিন্তু পাখিগুলোকে আশ্রয় দিল না। উল্টে আনন্দের সাথে সেগুলোকে কেটে, ছাল ছাড়িয়ে রান্না করে খেল।
কারণে অকারণে, জেনে না জেনে পশুর উপর বীভৎস নির্যাতনের দৃশ্য দেখছি প্রতিনিয়ত। রাস্তার বেওয়ারিশ কুকুরগুলোকে যেমন আঘাত লাঠিসোঁটা দিয়ে আঘাত করে একাংশ, ঠিক একইভাবে আজকাল ঘরের পোষা জন্তুগুলোও বাদ যাচ্ছে না।
সাধারণত মানুষের নৃশংসতা ও বর্বরতা শুরু হয় পশুর উপর নির্যাতনের মধ্য দিয়ে। এবং ধীরে ধীরে সেই নৃশংসতা অপরাধীর মস্তিষ্কে বসে যায়, এভাবে তার মধ্যে চলে আসে নৃশংসতার অভ্যস্ততা। তারপর একটা দুইটা তিনটা করতে করতে ছোট ছোট অপরাধগুলো বড় বড় অপরাধের দিকে এগিয়ে যায়। পশু হত্যা থেকে হাত চলে আসে মানুষ হত্যার উপর। পশুর মৃত্যু যন্ত্রণা ছটফটানি দেখতে দেখতে মানুষের ওপর নির্যাতনের ক্ষেত্রে স্বাভাবিকভাবেই অভ্যস্ততা চলে আসে।
পাশাপাশি রয়েছে দেশে উপযুক্ত শাস্তির অভাব। অসমে পরপর গণহত্যাগুলো সংঘটিত হচ্ছে, দিনের পর দিন মামলা ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে, অপরাধীর বিচার হবে এই আশায় মা-বাবা শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করছেন! বিচার হচ্ছে কী? হলেও যুগ পর!