রোগি-রোগির পরিবার চিকিৎসকের কাছে যান এক আশা নিয়ে, হয়তো পরিবারের মানুষটি ফের সুস্থ হয়ে চলাফেরা করতে পারবেন, হাসবেন, খেলবেন। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতি সম্পূর্ণ পাল্টে গেছে। এখন আর রোগি চিকিৎসকের কাছে আশা নিয়ে যান না, যান একরাশ ক্ষোভ নিয়ে। ঈশ্বরের কৃপায়, ডাক্তারের ধৈর্য, একনিষ্ঠতায় তিনি ভাল হয়ে গেলে তো ভালই, দুর্ভাগ্যজনকভাবে যদি মারা যান, তাহলে সে ডাক্তারেরও আর বেঁচে থাকার কোন অধিকার নেই।
অসমের যোরহাট জেলার টিয়ক চা বাগানের প্রবীণতম চিকিৎসক নিরপরাধী ডঃ দেবেন দত্তকে রোগির মৃত্যুর জন্যে দায়ী করে যেভাবে নৃশংসভাবে মেরে হত্যা করেছে, তাতে শংকিত হয়ে পড়েছেন রাজ্যের বাকি টি-এস্টেটের চিকিৎসকরা। সূত্রের খবর অনুযায়ী, এ পর্যন্ত কর্ম থেকে ইস্তফা দিয়েছেন এক ফার্মাসিস্ট সহ ৫ জন চিকিৎসক। ডঃ দেবেনের মতো একনিষ্ঠ একজন চিকিৎসকের সঙ্গে এমন পাশবিক ঘটনা ঘটেছে, তাঁদের সঙ্গেও যে হবে না, তাঁর কোন নিশ্চয়তা তো প্রশাসন দিতে পারছে না! ফলে তাঁদের মতে ইস্তফা ছাড়া গতি নেই।
মঙ্গলবার চাকুরি থেকে ইস্তফা দেয়া চিকিৎসকদের মধ্যে রয়েছেন, যোরহাট জেলার হোনোয়াল চা-বাগানের চিকিৎসক নিপুণ কৰ্মকার, একই বাগানের ফার্মাসিস্ট মানবজ্যোতি বরা, ভেলেউগুরি চা বাগানের ডঃ এস এন সিং, কাকজান বাগানের ডঃ লোপা দাস, ডিব্রুগড়ের একটি চা-বাগানের চিকিৎসক রবি বরুয়া।
রাজ্যের বিভিন্ন জেলার চা-বাগানের কর্তব্যরত চিকিৎসকরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। প্রশাসনের দায়হীনতা তাঁদের কুরে কুরে কুরে খাচ্ছে। রাজ্য প্রশাসনের ওপর থেকে সম্পূর্ণ আস্থা হারিয়ে ফেলেছেন চিকিৎসকরা।
চার চিকিৎসকের ইস্তফাপত্র প্রেরণ করার পূর্বে গোলাঘাট জেলার নুমলিগড় চা বাগানের চিকিৎসক ডঃ অজয় কটকি বাগানের কৰ্তৃপক্ষের হাতে ইস্তফাপত্র প্রেরণ করেছিলেন।
ডঃ দেবেন দত্তের মর্মান্তিক মৃত্যু রাজ্যের চিকিৎসকদের কাঁপিয়ে দিয়েছে। বরাক উপত্যকায় তীব্র প্রতিবাদ সাব্যস্ত করছেন জুনিয়র-সিনিয়র চিকিৎসকরা।
এদিকে আজ বুধবার পরিস্থিতি খতিয়ে দেখার জন্যে ভারতীয় চিকিৎসা সেবা সংস্থার সভাপতি তথা রাজ্যসভার সাংসদ ডঃ শান্তনু সেন নয়া দিল্লি থেকে যোরহাট আগমণের কথা রয়েছে।