১৪ ফেব্রুয়ারি বিশ্ব প্রেম দিবস বা ভ্যালেন্টাইনস ডে। সারা বিশ্ব আজ ভালোবাসার রঙে রঙিন। যারা মানেন তাঁরা তো প্রাণ ঢেলে দেন, আর যারা অংকের ফর্মুলায় জীবনকে ছাঁকেন প্রতিমুহূর্তে, তাঁরা বলছেন প্রেমের আবার দিবস কিসের? এছাড়া এতো শুধুই সেক্স! আদৌ কী তাই?
ফাগুনের মোহনায়, বসন্তের আগমণে মন উচ্ছ্বসিত, দোলা খাচ্ছে বারংবার।
অতুলনীয়, অপূর্ব একটি দিন আজ।
স্পষ্টভাবে বললে, আমাদের সমাজ কিন্তু একবিংশ শতাব্দীতেও মুক্তমনে এই প্রেম দিবসকে মেনে নিতে পারেনি। এ বড় দুর্ভাগ্যজনক।
মুসলমান মৌলবাদীরা ওয়াজে বলে চলে, প্রেম বা ভ্যালেন্টাইন্স ডে’ ইসলাম সংস্কৃতির বিষয় নয়। এদিকে হিন্দু মৌলবাদিরাও একই পথের পথিক।
কী আশ্চর্য! ভালোবাসা কী জাত-ধর্ম-সংস্কৃতি দেখে হয়? কোন কালে হয়েছিল?
পবিত্র এই প্রেম দিবসকে মেনে না নেওয়ার একমাত্র কারণ হলো, সংকীর্ণমনাদের মতে প্রেম মানেই যৌনতা, প্রেম মানেই বেলেল্লাপনা।
কিন্তু প্রেম শুধু যে প্রেমিক,প্রেমিকা, স্ত্রী-স্বামীর মধ্যেই সীমাবদ্ধ, তা মোটেও নয়। আমরা গুরুজনদের ভালোবাসি, মা-বাবাকে ভালোবাসি, শিক্ষককে ভালোবাসি এও প্রেম।
আজকের এ ভালোবাসা শুধুই প্রেমিক আর প্রেমিকার জন্য নয়। মা-বাবা, স্বামী-স্ত্রী, ভাইবোন, প্রিয় সন্তান এমনকি বন্ধুর জন্যও ভালোবাসার জয়গানে আপ্লুত হতে পারে সবাই। চলবে উপহার দেয়া-নেয়া।
তবে কেন শুধুই যৌনতার দিকে দৃষ্টি যায়?
কেন আমরা সমাজে নারী-পুরুষের প্রেম, সমকামীদের প্রেম মেনে নিতে পারি না? সমকামী বললেই কচকচি করা লোকেরা নাক কুচকোন! এ কেমন মুক্ত মানসিকতা? এ পৃথিবীতে ভালোবাসার, প্রেম করার, সেক্স করার অধিকার প্রত্যেকের রয়েছে, সেখানে কেউ কোনভাবে তাঁকে হেয় প্রতিপন্ন করতে পারেন না। কারণ একফোঁটা ভালোবাসা মানুষকে জীবন দান করতে পারে। তা বোঝা যাবে তখনই যখন ছাঁচে ফেলে সন্দেশ বানানো জীবন থেকে সরে আসা যাবে।
চুমু আমরা কাকে না খাই? মাকে, বাবাকে, আত্মিয়কে সকলকে। এ ভালোবাসারই আরো একটি বহিঃপ্রকাশ। তবে প্রেমিক-প্রেমিকাকে চুমু খাওয়ার সময় অবশ্যই সেখানে শারীর জাগে। তাই বলে সে অন্যায় নয়।
বহু লোক নিন্দে করে বলে থাকেন, ৩৬৫ দিন ভালোবাসা নেই, ১ দিন ভালোবেসে কী হবে? আমরা বলি এই একটি দিনই যদি চিরস্মরণীয় হয়ে থাকে জীবনে, তাহলে সে মূলধন নিয়েই সারা জীবন বেঁচে থাকা যায়।
অথবা দিনটিকে নিন্দে-সমালোচনার আগুনে পোড়ানোর বদলে আমরা কী পারি না ইতিবাচক দিকে নিয়ে তাঁকে ৩৬৫ দিনে রূপান্তর করতে?
প্রেমিক-প্রেমিকারা এ দিনটিকে ঘিরে বছর জুড়ে কল্পনার জগৎ সাজাতে থাকেন। এ দিনে নীল খামে হালকা লিপস্টিকের দাগ, একটি গোলাপ ফুল, চকলেট, ক্যান্ডি, ছোট্ট চিরকুট আর তাতে দু’ছত্র গদ্য অথবা পদ্য হয়ে উঠে উপহারের অনুষঙ্গ। যদিও সময়ের পরিবর্তনে পাল্টাচ্ছে ভ্যালেন্টাইন ডে’র উপহারের ধরণ। ফুলের পরিবর্তে ভালোবাসার প্রকাশ হচ্ছে দামী কোনও দ্রব্যে।
কবি নির্মলেন্দু গুণের ভাষায়ঃ`ভালোবাসা একটি বিশেষ ৭ দিনের জন্য নয়। সারাবছর, সারাদিন ভালোবাসার। তবে আজকের এ দিনটি ভালোবাসা দিবস হিসেবে বেছে নিয়েছে মানুষ।`
ভালোবাসা যায় সমকামীদের, ভালোবাসা যায় পঙ্গুদের, ভালোবাসা যায় দুঃস্থ, অসুস্থদের, ভালোবাসা যায় রাস্তায় রাস্তায় ভিক্ষে করা মানুষদের। যারা জীবনে একটু ভালোবাসা পাওয়ার জন্যে নীরবে বালিশ ভেজায়!
কে বলেছে এই আবেগ মিথ্যে, কে বলেছে এই ভালোবাসা পাপ?
ভালোবাসাকে সরল পথে চলতে দেওয়া হয়নি কোন কালেই। তাই বলে কি তা থেমে রয়! কত মানুষ জাত-কুল ছেড়ে ঘর বাঁধল, অসম প্রেমের কলঙ্ক নিয়ে দিব্বি জীবন কাটিয়ে দিলো, লোক নিন্দার ভয়ে কত প্রেমের কাহিনী অজানা র’য়ে গেলো। কিন্তু ভালোবাসা তো থেমে থাকেনি।
ভালোবাসা আছে বলেই তো দীর্ঘদিন পথ চলে স্বামী-স্ত্রী এখনো একে অপরের জন্য পাগলপারা। একে অপরকে খুশি-সুখী করার সে কি নিরন্তর চেষ্টা! বয়সের ভারে ন্যুহ্য দুটি শরীরও একে অপরের চোখে প্রেমের ছায়া দেখতে পায় স্পষ্ট, যেন মহাকাল সাক্ষী তাদের প্রেমের।
ভালোবাসা দিবসের এই ভালোবাসা যেন আবদ্ধতার গণ্ডীতে আবদ্ধ না হয়। এ যেন ছড়িয়ে পড়ে দিকবিদিকে জ্ঞানশূন্য হয়ে পাগলের মতো।
’আমি ফুল বন্ধু ফুলের ভ্রমরা/কেমনে ভুলিব আমি বাঁচি না তারে ছাড়া. . . .। মনের মানুষটি ছাড়া সত্যি বাঁচা দায়। ভালোবাসাহীন জীবন বড়ই বিবর্ণ। তাই এত আকুলি বিকুলি ভালোবাসার জন্য ।
ভালোবাসা চিরন্তন। সব সময় ভালোবাসার বন্ধন অটুট থাকুক। ভালোবাসা সার্বজনীন। নিখাদ ভালোবাসা ছড়িয়ে পড়ুক হৃদয় থেকে হৃদয়ে।
ভালোবাসা দিবসে সারা পৃথিবীর পুরুষ প্রতিজ্ঞা করুক, আর নয় নারী নির্যাতন, আর নয় ধর্ষণ! ওরা পারলে নারীও পারবে জীবন-মরণ উজাড় করে ভালোবাসতে। একটি দিন প্রেমের অভিনয় করে বছরের ৩৬৪ দিন ধর্ষণ করলে সেই পুরুষের ভ্যালেন্টাইন্স ডে পালনের কোন অধিকার নেই।