চাপা আতঙ্ক আর উন্মাদনা, উচ্ছ্বাসের মধ্যে দিয়ে প্রকাশিত হল এনআরসির চূড়ান্ত তালিকা। তবে এই তালিকাটি কি পূর্ণাঙ্গ তালিকা না আংশিক ? এনিয়ে অবশ্যই তর্ক-বিতর্ক রয়েছে,রয়েছে আমজনতার একহাজার প্রশ্ন ?
পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী ৩১আগষ্ট জাতীয় নাগরিক পঞ্জীয়ন তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে। খুব ভালো । আর কত টানাপোড়েন?
যাইহোক, পুলিশ ও আধাসামরিক বাহিনীর রক্তচক্ষু আর কড়া নজরদারির মধ্যে দিয়ে প্রকাশিত তালিকার নিটফল নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে বাড়তি কোনও উচ্ছ্বাস বা জিজ্ঞাসা পরিলক্ষিত হয়নি । শুধু আমরা কি দেশি না বিদেশির সার্টিফিকেটধারী,কোনটা ? এটাই একটা মস্ত বড় জিজ্ঞাসা ?
কত কয়েক বছরের অপেক্ষা আর ১২০০ কোটি টাকা ব্যয় করে তৈরি করা দলিল অর্থাৎ অসমের চূড়ান্ত এনআরসির তালিকাটি অসাড় বলছেন অনেকেই।
সরকারি ভাষ্য ও তথ্য অনুযায়ী,এনআরসির চূড়ান্ত তালিকা থেকে বাদ পড়েছেন ১৯ লক্ষ ৬ হাজার ৬৫৭ জন। বাদ পড়েছেন যাঁরা তাদের প্রত্যেকেরই ভবিষ্যৎ এই মুহূর্তে অনিশ্চয়তার মুখে বলা সমুচিত। প্রত্যেকেই আপাতত একটা অজানা,অদৃশ্য সুতোয় ঝুলে পড়েছেন।
অনেকেই রয়েছেন, যাঁরা হয়তো শৈশব থেকেই এই দেশকে নিজের জন্মভূমি বা স্বভূমি হিসেবেই জেনেছেন,চিনেছেন। অথচ এনআরসি বিড়ম্বনায় তাদেরকেই যেকোনও মুহূর্তে ভিটেমাটি ছাড়তে হতে পারে। যদিও তা অকল্পনীয়,অবিশ্বাস্য । কিন্তু বাস্তবিকতা তো অন্তত এটাই বলছে। এই ১৯ লক্ষের তালিকায় অধিকাংশই যে বাঙালি, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। যা নিয়ে চরম অসন্তুষ্ট বাংলা ও বাঙালি অধ্যুষিত বরাক উপত্যকার বিশিষ্টজনেরা। অনুমান করা হচ্ছে, বাতিলের তালিকায় যে ১৯ লক্ষ নাম রয়েছে, এর অধিকাংশই বাংলা ভাষাভাষী মানুষ। জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে বাঙালিদেরই টার্গেট করা হচ্ছে বলে মনে করেন এ অঞ্চলের বুদ্ধিজীবী মহল থেকে শুরু করে আমজনতা।
প্রশ্ন উঠাটাই যে স্বাভাবিক, একটা বিশেষ ভাষাগোষ্ঠীর ১৯ লক্ষ মানুষই যদি বাদ পড়ে যায়, তাহলে অবশিষ্ট আর রইল কী?
যে জাতিবিদ্বেষ এবং জাতিঘৃণা সংবিধানিক রীতির উপরে চলে যায়, গণতান্ত্রিক রীতির উপরে চলে যায়, এটা তো তারই জয় হলো। আসলে এটা তো অন্ধকারের জয়। যে লড়াই বাংলা ও বাঙালিরা তথাকথিত সংজ্ঞা অর্থাৎ খিলঞ্জিয়ার শর্ত আদায়ে চলছে। বাঙালিরা কিন্তু সেই লড়াই করে যাচ্ছে। লড়াইটা কয়েক দশক ধরেই চলছে এবং চলবে।
ভোটব্যাংকে ধ্বস নামার আশঙ্কা কিংবা মানবিকতার তাগিদে বর্তমান ক্ষমতাসীন রাজ্য সরকার বাদ পড়া ১৯ লক্ষ মানুষের পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছে যদিও সরকারের এই আশ্বাস আদৌ কি বাস্তবায়িত হবে? তা নিয়ে রীতিমতো সংশয় রয়েছে,রয়েছে যথেষ্ট আতঙ্ক। তাছাড়া সরকার যে ফরেন ট্রাইব্যুনালের কথা বলছে, তাতে যারা বাতিলের খাতায় রয়েছেন,তারা আদৌ কি উপকৃত হবেন? তা নিয়ে সংশয় ব্যক্ত করেন অনেকেই।
উল্লেখ্য,এরআগে দুই দফায় প্রকাশিত খসড়া তালিকায় যাদের নাম অন্তর্ভুক্ত ছিল,তাঁদের নাম আবার সদ্যপ্রকাশিত তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। শুধু বায়োমেট্রিক পরীক্ষণে উত্তীর্ণদের নাম অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে বলে জানা গেছে।
ফলে সদ্যপ্রকাশিত তালিকা সহ মোট তিনদফায় প্রকাশিত তালিকায় সন্নিবিষ্ট আবেদনকারীদের নামের তালিকা কবে নাগাদ প্রকাশিত হবে। এটাই এখন চর্চার বিষয়।