ডায়াবেটিস একটি নিরব ঘাতক। তা প্রতিরোধে সতর্ক না হলে নির্ঘাত মৃত্যু ঘটবে। বিশ্ব ডায়বেটিস দিবস উপলক্ষে আলোচনা সভায় একথা বলেন করিমগঞ্জের বিশিষ্ট চিকিৎসক ডা: ইন্দ্রনীল দে।
স্ফুরণ পত্রিকা গোষ্ঠী ও সুহাসিনী এক্সরে এন্ড ল্যাবরেটরির যৌথ উদ্যোগে বৃহস্পতিবার করিমগঞ্জ শহরে বিশ্ব ডায়বেটিস দিবস পালিত হয়। এ উপলক্ষে এদিন “ডায়বেটিসের ভয়বহতা ও প্রতিরোধ ” শীর্ষক আলোচনা সভায় মুখ্য আলোচক ডা: দে বলেন, ডায়াবেটিস ভারতে মহামারীর রূপ নিচ্ছে। ঘরে ঘরে ডায়বেটিস রোগীর সংখ্যা বাড়ছে।আগে বলা হতো আরামপ্রিয় মানুষেরা ডায়বেটিসে আক্রান্ত হন। কিন্তু এই ধারণা এখন ভেঙে গেছে। পরিশ্রমি মানুষরাও এই রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন।আশংকার বিষয় হলো, শিশুদের মধ্যেও ডায়াবেটিসের প্রাদুর্ভাব বাড়ছে। মূলত অবৈজ্ঞানিক জীবনশৈলী ও অনিয়ন্ত্রিত খাদ্যাভ্যাসের জন্যই ডায়বেটিস রোগীর সংখ্যা দিনদিন বাড়ছে। তবে বংশগত কারণেও ডায়বেটিসে আক্রান্ত হচ্ছেন বহু মানুষ। এই মুহুর্তে ভারতে ডায়বেটিস রোগীর সংখ্যা সাত কোটি ছাড়িয়ে গেছে। আগামী দশ বছরের মধ্যে দশ কোটি ছাড়ানোর আশংকা করেছে ওয়াকিবহাল মহল।
আমাদের দেশে এই ভয়াবহ চিত্র দেখে ভারতকে ডায়বেটিসের রাজধানী বলছে আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো।তিনি আশার কথা শুনিয়ে বলেন,ডায়বেটিস মানেই মৃত্যু নয়।তা প্রতিরোধ করে সুস্থ জীবন কাটানো সম্ভব।
আজ থেকে কুড়ি-পঁচিশ বছর আগেও ডায়বেটিস রোগে আক্রান্ত হলেও রোগী তা বুঝতে পারতেন না।তাছাড়া রোগ সম্পর্কে অনেকের মধ্যে ভূল ধারণা ছিল। কিন্তু চিকিৎসা বিজ্ঞানের উন্নতির ফলে ডায়বেটিস শনাক্তকরণ সহজ হয়েছে। ঘরে বসেও তা পরীক্ষা করার মতো যন্ত্র আবিষ্কার হয়েছে।তাছাড়া,ইনসুলিন ছাড়াও ভালো ওষুধ বাজারে রয়েছে।অভিজ্ঞ চিকিৎসকের দ্বারা সময়মতো চিকিৎসা করলে ডায়বেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব।
পঁচিশ বছর বয়স থেকেই মাঝেমধ্যে রক্তের শর্করার মাত্রা মাপা প্রয়োজন । তবে বিজ্ঞানসম্মত জীবনশৈলী ও নিয়ন্ত্রিত খাদ্যাভ্যাস করতে হবে। জীবনযাত্রা শৃঙ্খলাপরায়ণ করতে হবে।
খাদ্যাভ্যাস সম্পর্কে বলতে গিয়ে তিনি বলেন,প্রাতরাশে ভারী খাবার,দুপুরে মাঝারি ও রাতে হালকা খাবার খেতে হবে।প্রচুর শাকসবজি ও ফলমূল খেতে হবে।ফাস্টফুড ছাড়তে হবে।এদিন খাদ্যাভ্যাস নিয়ে বক্তব্য রাখেন ডায়টেশিয়ান সাহাজ আহমদ।আলোচনা সভা শেষে মোট ৫০ জনের রক্তের শর্করার মাত্রা পরীক্ষা ও ২৯ জনের লিপিড প্রোফাইল পরীক্ষা বিনামূল্যে করা হয়।তাছাড়া খাদ্যাভ্যাস ও শরীরচর্চা সংক্রান্ত নির্দেশিকা বই সকলের হাতে তুলে দেওয়া হয়।
অনুষ্ঠানের উদ্দেশ্য ব্যাখ্যা করে স্ফুরণ সম্পাদক বিশ্বজিৎ দাস বলেন, পত্রিকা পরিচালনার পাশাপাশি সীমিত ক্ষমতার মধ্যে স্ফুরণ সামাজিক কর্মকান্ড করে।বিনামূল্যে স্বাস্থ্য শিবির,রক্তদান শিবির করে থাকে।এ বছর বিশ্ব মধূমেহ দিবস পালনের উদ্যোগ নিয়েছে।স্ফুরণ ও সুহাসিনীর এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়ে বক্তব্য রাখেন নিমাই দে,পুতুল দে,শংকর চক্রবর্তী, অরবিন্দ দাস ও প্রবীণ পাল।
অনুষ্ঠানের শুরুতে রেল শ্রমিক আন্দোলনের নেতা নিমাই দে ও কবি-প্রাবন্ধিক শংকর চক্রবর্তীকে উত্তরীয় ও স্মারক দিয়ে সম্মান জানানো হয়।ভাষা সেনানী নিশীথরঞ্জন দাস অসুস্থতার জন্য অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকতে না পারায় তার বাড়িতে গিয়ে স্মারক সম্মান তুলে দেন অনুষ্ঠানের আয়োজকরা।