আজ সোমবার থেকে শুরু হচ্ছে সংসদের শীতকালীন অধিবেশন। আগামি ১৩ ডিসেম্বর অবধি অধিবেশন চলবে।
শীতকালিন অধিবেশনেই সরকার নতুন করে রাজ্যসভায় আনতে চলেছে নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল বা ক্যাব।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বারংবার বলেছেন, দেশভাগের যন্ত্রণা ভোগ করছে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়। মুসলিম প্রধান দেশের যে সব সংখ্যালঘু ধর্মাবলম্বীরা ধর্মীয় কারণে প্রচণ্ড নির্যাতন, হিংসার শিকার হয়ে ভারতে আশ্রয় নিয়েছিলেন তাঁদের নাগরিকত্ব দেওয়াই এই বিলের লক্ষ্য।
বিজেপি এ বিল পাশ করানোর ব্যাপারে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।
‘বিবিধের মাঝে দেখ মিলন মহান’ সেই ভারত তার সকল পুত্র কন্যাদের আশ্রয় দিয়ে ইতিহাসের ভুলকে সংশোধন করবে।
এদিকে অসম থেকে শুরু করে উত্তর পূর্ব ভারতের বহু রাজ্যে বিজেপির প্রস্তাবিত নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল বা ক্যাব-এর বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ সাব্যস্ত করা হচ্ছে।
সারা অসম ছাত্র সংস্থা বা আসুর পাশাপাশি অসম যুব ছাত্র পরিষদ, কৃষক মুক্তি সংগ্রাম সমিতি ইতিমধ্যেই ফের ক্যাব বিরোধী আন্দোলনে সামিল হয়েছে।
মেঘালয়ের মুখ্যমন্ত্রী, এনপিপি সুপ্রিমো কনরাড সাংমা তো পূর্বেই জানিয়ে দিয়েছেন তাঁরা ক্যাব মানবেন না।
ত্রিপুরায় বিজেপির জোট শরিক আইপিএফটি-ও আন্দোলনে নেমেছে ক্যাব-এর বিরোধিতায়।
এসব কোন প্রতিবাদের তোয়াক্কা না করে শুক্রবার অসমের অর্থমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মা ঘোষণা করেছেন, সংসদের শীতকালীন অধিবেশনের প্রথম দুদিনের মধ্যেই ক্যাব পাশ হবে।
আমরা এক ঝলকে দেখে নেব ক্যাবের বিষয়েঃ
প্রথমত, সংশোধনী বিলের উদ্দেশ্য ১৯৫৫ সালের নাগরিকত্ব আইন সংশোধন। আফগানিস্তান, বাংলাদেশ এবং পাকিস্তান থেকে ভারতে আসা হিন্দু, শিখ, বৌদ্ধ, জৈন, পারসি এবং খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীদের ভারতীয় নাগরিকত্ব প্রদান করা হবে ক্যাবের মাধ্যমে।
দ্বিতীয়ত, ১৯৫৫ সালের নাগরিকত্ব আইনে ভারতের নাগরিকত্ব পাওয়ার জন্য ১২ মাস টানা ভারতে থাকার নিয়মের সঙ্গে বিগত ১৪ বছরের মধ্যে ১১ বছর ভারতবাস করা জরুরি।
এবারের সংশোধনী বিলে দ্বিতীয় অংশে পরিবর্তন সাধন হচ্ছে। উপরোক্ত দেশগুলি থেকে আসা ৬ ধর্মাবলম্বীদের জন্য ১১ বছর সময়কালটিকে হ্রাস করে আনা হচ্ছে ৬ বছরে।
তৃতীয়ত, বর্তমান নাগরিকত্ব আইনের আওতায় ভারতে জন্ম নেওয়া কোনও ব্যক্তি অথবা যাঁর বাবা মা ভারতীয়, অথবা যিনি ভারতে একটি নির্দিষ্ট সময়কাল জুড়ে বাস করে এসেছেন, তিনি ভারতীয় নাগরিকত্ব পাবেন।
চতুর্থত, বর্তমান সংশোধনী আইনে কেউ যদি পাসপোর্ট বা ভিসা ছাড়া ভারতে প্রবেশ করেন অথবা বৈধ নথি নিয়ে প্রবেশ করার পরে নির্দিষ্ট সময়ের বেশি ভারতে বাস করেন, তাহলে তিনি অবৈধ অভিবাসী বলে গণ্য হবেন।
পঞ্চমত, ভারতের বিদেশি আইন ১৯৪৬ এবং পাসপোর্ট আইন ১৯২০ অনুসারে অবৈধ অভিবাসীকে জেলে পাঠানো বা প্রত্যর্পণ করা হয়।
ষষ্ঠ, ২০১৫ এবং ২০১৬ সালে সরকার কিছু ছাড় দিয়েছে। ২০১৪ সালের ৩১ ডিসেম্বর ও তার আগে আফগানিস্তান, বাংলাদেশ ও পাকিস্তান থেকে ভারতে আগত হিন্দু, শিখ, বৌদ্ধ, জৈন, পারসি এবং খ্রিস্টানদের ছাড় দেওয়া হয়েছে।
সপ্তম, উপরোক্ত গোষ্ঠী সদস্যরা বৈধ কাগজপত্র ছাড়া ভারতে বাস করলেও তাঁদের জেলে বা নিজের দেশে পাঠানো হবে না।
অষ্টম, ২০১৬ সালের নাগরিকত্ব (সংশোধনী) বিল সংসদে আনা হয়েছে যেন ১৯৫৫ সালের নাগরিকত্ব বিল সংশোধন করে এই ব্যক্তিদের ভারতীয় নাগরিকত্ব দেওয়া যায়।
নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল নিয়ে বিরোধীপক্ষের এত আপত্তির মূল কারণ হলো এ বিলে মুসলিম ধর্মাবলম্বীদের টার্গেট করা হয়েছে। সংবিধানের ১৪ নং অনুচ্ছেদে যে সমতার অধিকার সুনিশ্চিত করা হয়েছে, এ বিল তার পরিপন্থী বলে দাবি জানাচ্ছেন সমালোচকরা।
২০১৬ সালের ১৯ জুলাই তারিখে লোকসভায় পেশ হয় ক্যাব।
এর পরের মাস অর্থাৎ ১২ অগস্ট বিলটি পাঠানো হয়েছিল যৌথ সংসদীয় কমিটিতে। কমিটি সেই রিপোর্ট জমা দেয় ২০১৯ সালের ৭ জানুয়ারি তারিখে।
চলতি বছরের ৮ জানুয়ারি লোকসভায় নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল পাশ হয়ে যায়। কিন্তু ঠেকে রাজ্যসভায়।
সংসদের শীতকালিন অধিবেশনে সেই বিলই ফের আনা হচ্ছে। সরকারের লক্ষ্য রাজ্যসভা এবং লোকসভায় এই বিল পাশ করানো।