শিলচর: বিগত পুজোর সময় বাংলায় ব্যানার লেখার অভিযোগে আসামের ব্রহ্মপুত্র উপত্যকার ২৪ টি পুজো প্যান্ডেলে তান্ডব চালায় লাচিত সেনা এবং আসু সহ বিভিন্ন জাতীয়তাবাদী সংগঠন।
মাতৃভাষার এই অপমানের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ সাব্যস্ত করতে একটি নাগরিক সভার ডাক দেন অরুন্ধতী গুপ্ত ও অলোকা দেব নামক দুই গৃহবধূ তথ্য সমাজকর্মী।
মূলতঃ তাঁদের যৌথ উদ্যোগেই এই প্রক্রিয়ায় শরিক হন এই উপত্যকার বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ এবং তারই পরিণতিতে আয়োজিত হয় একটি প্রতিবাদী গনধর্ণা কর্মসূচি।
ভাষা জননীর সম্মান রক্ষার্থে এই দুই সমাজকর্মীর এই সাহসিক উদ্যোগকে মান্যতা দিতে আজ শিলচর প্রেস ক্লাবে তাঁদের সংবর্ধনা দিল বরাক ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট।
এদিন তাদের হাতে পুষ্পস্তবক তুলে দেন বিডিএফ আহ্বায়ক হৃষীকেশ দে ও জয়দীপ ভট্টাচার্য। এরপর বিডিএফ সদস্যদের পক্ষ থেকে তাদের হাতে মানপত্র তুলে দেন উপস্থিত বিডিএফ এর সদস্যরা।
পরে সাংবাদিকদের সামনে বক্তব্য রাখতে গিয়ে বিডিএফ মুখ্য আহ্বায়ক প্রদীপ দত্তরায় বলেন যে এই প্রতিবাদী কর্মসূচি নেবার দায়িত্ব ছিল স্বীকৃতি প্রাপ্তি রাজনৈতিক দল তথা উপত্যাকার মাতৃভাষা প্রেমী সংগঠন গুলির।
এই দায়িত্ব পালিত না হলেও এই ব্যাপারে ‘ আশ্বাস’ এনজিও র সাথে যুক্ত এই দুই গৃহবধু যেভাবে স্বপ্রনোদিত হয়ে এগিয়ে এসেছেন , নাগরিক সভার ডেকেছেন এবং তাঁকে সফল করে তুলতে অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন তা অভাবনীয় এবং তাঁর জন্য রাজ্যের আপামর বাংলা ভাষীদের পক্ষ থেকে তাঁরা তাঁদের অভিনন্দন জানাচ্ছেন।
প্রদীপ বাবু বলেন এখনকার যুব প্রজন্ম যেভাবে আত্মমগ্ন এবং এসব বিষয়ে উদাসীন সেখানে এই দুই গৃহবধুর এই উদ্যোগ শুধু প্রশংশনীয় নয় এটি বরাকের ইতিহাসের এক উজ্জ্বল অধ্যায় হিসেবে বিবেচিত হবে।
বিডিএফ মিডিয়া সেলের মুখ্য আহ্বায়ক জয়দীপ ভট্টাচার্য বলেন যে তাঁরা আশাবাদী যে অরুন্ধতী গুপ্ত ও অলোকা দেবের এই ধরণের উদ্যোগের ফলস্বরূপ বরাকের আরো অনেক মহিলা নিজ মাতৃভাষা তথা অন্যান্য অধিকার রক্ষার্থে আগামীতে এগিয়ে আসবেন এবং তাদের স্বামী সহ পরিবারবর্গকে এই আন্দোলনে শরিক হতে অনুপ্রাণিত করবেন।
জয়দীপ বলেন ভাষিক আগ্রাসন সহ সমস্ত বঞ্চনা,বৈষম্য নিয়ে মাঠে নেমে আন্দোলন না করলে এই উপত্যাকার উন্নয়নকে দিশপুরের সরকার কখনই প্রাধান্য দেবেনা।
বিডিএফ এর আরেক আহ্বায়ক হৃষীকেশ দে বলেন ভাষা জননীর সম্মান রক্ষার্থে এই উপত্যাকায় শহিদ হয়েছেন কমলা ভট্টাচার্য। যেখানে পুরুষ প্রধান সমস্ত দল সংগঠন কোন কর্মসূচি নিতে ব্যার্থ সেখানে এই দুই গৃহবধুর এই প্রয়াস শহিদ কমলা ভট্টাচার্যের প্রতি যথাযথ শ্রদ্বাঞ্জলি বলেই তিনি মনে করেন। তিনি এদিন তাঁদের সুস্থতা ও সমৃদ্ধ জীবন কামনা করেছেন।
এদিনের সভায় উপস্থিত সমাজকর্মী আদিমা মজুমদার অরুন্ধতী গুপ্ত ও অলোকা দেবকে এই উদ্যোগের জন্য সংগ্রামী অভিনন্দন জানিয়ে বলেন বাংলা ভাষার অধিকার রক্ষায় যে কোন ব্যানারের তলে দাঁড়িয়ে তিনি প্রতিবাদ করতে সর্বাদাই প্রস্তুত রয়েছেন। তিনি দুস্কৃতীদের বিরুদ্ধে অবিলম্বে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে সরকারের কাছে দাবি জানান।
এদিনের সম্মাননার পরিপ্রেক্ষিতে অরুন্ধতী গুপ্ত ও অলোকা দেব বিডিএফ এর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বলেন যে আজকের এই সম্মাননাকে তাঁরা আজীবন মনে রাখবেন কারণ মায়ের ভাষার অধিকার রক্ষায় তাঁদের সামান্য প্রয়াসকে আজ মান্যতা দেওয়া হল।
তাঁরা বিডিএফ কর্মকর্তাদের ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন যে তাঁদের অভিভাবক হিসেবে না পেলে এই পদক্ষেপ নেওয়া সম্ভব হতনা। তাঁরা এও বলেন যে এই ইস্যুতে তাঁদের প্রতিবাদ চলবে এবং অনতিবিলম্বে তাঁদের পরবর্তী কর্মসূচি তাঁরা ঘোষণা করবেন।
বিডিএফ এর পক্ষ থেকে এক প্রেস বার্তায় দেবায়ন দেব এই খবর জানিয়েছেন।