অসমের ভাষা সৈনিক নিশীথ রঞ্জন দাস বলেছেন, “আমি প্রথমবারের মতো বাংলাদেশে এসেছি। মনে হচ্ছে-এটাই আমার দেশ। চারপাশে স্বজন। বিশ্বাস করুন, বাঙালি জাতির কোনো দেশ ছিল না। পাখির ভাষা আছে, আমাদের ছিল না। আমি বাংলাদেশের ভোটার নয়, তবু এ দেশ আমার আপন। এ দেশও আমার। ২১ ফেব্রুয়ারি-সস্ত্রীক বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে সকল ভাষা শহিদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়েছি। পুস্পাঞ্জলি দিয়েছি। এখানে এসে শহিদদের প্রতি সম্মান জানাব, বহু যুগের স্বপ্ন ছিল। কী যে ভাল লাগছে, কী যে শান্তি লাগছে-বুঝাতে পারবো না।”
শুক্রবার দুপুর সাড়ে ১২টায় ঢাকার কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে শ্রদ্ধা জানাতে আসা আসামের ভাষা সৈনিক নিশীথ রঞ্জন দাস এইসব কথা বলেন।
মাতৃভাষার প্রতি সম্মান দেখাতে হবে জানিয়ে নিশীথ রঞ্জন দাস বলেন, বাংলাদেশের ভাষা আন্দোলন ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি। সেই সূত্র ধরেই আসামের বাঙালি অধ্যুষিত বরাক উপত্যকার শিলচরে বাংলা ভাষার জন্য আন্দোলন ১৯৬১ সালের ১৯ মে। আসামের রাজ্যভাষা হিসেবে বাংলাভাষাকে স্বীকৃতি দানের দাবিতে ১১টি তাজা প্রাণ নিভেছে। অবিভক্ত বাংলার সিলেট জেলার অংশ কাছাড় (শিলচর), করিমগঞ্জ ও হাইলাকান্দিকে বাংলা থেকে বিছিন্ন করে আসাম প্রদেশের সঙ্গে মিলিয়ে দেওয়া হয়। খাঁটি বাঙালি হয়েও এপার বাংলা-ওপার বাংলা কোনো বাংলাতেই স্থান হয়নি ঈশান বাংলার বা বরাক বাঙালীর। করিমগঞ্জ, কাছাড়, শিলচর, হাইলাকান্দি নিয়ে গড়া বরাক উপত্যকা পুরোপুরি বাঙালিদের এলাকা। দেশ বিভাগের এক বছর পর রেফারেন্ডামের মাধ্যমে সুরমা ভ্যালি (বর্তমান বাংলাদেশের সিলেট বিভাগ) পূর্ব পাকিস্তনের অন্তর্ভুক্ত হয়। কিন্তু বৃহত্তর সিলেটের তিন-চতুর্থাংশ নিয়ে গঠিত বরাক ভ্যালি থেকে যায় আসামে।
১৯৬০ সালের ২১ ও ২২ এপ্রিল আসাম প্রদেশ কংগ্রেস অসমিয়াকে রাজ্য ভাষা করা নিয়ে প্রস্তাব গ্রহণ করে। সেই সূত্র ধরেই ব্রহ্মপুত্র উপত্যকায় শুরু হয় ‘বঙ্গাল খেদাও’। বাংলাভাষীরা দলে দলে ব্রহ্মপুত্র উপত্যকা ছেড়ে বরাক উপত্যকা, প্রতিবেশী রাজ্য পশ্চিমবঙ্গ এবং উত্তরপূর্বের অন্যান্য অঞ্চলে আশ্রয় নেয়। ২ জুলাই শিলচরে ‘নিখিল আসাম বাংলা ও অন্যান্য অনসমিয়া ভাষা সম্মেলন’ ডাকা হয়। ১৯৬০ সালের ১০ অক্টোবর রাজ্যভাষা বিল পাস হয়ে গেল আসাম বিধানসভায়। নতুন আইনে সমগ্র আসামে সরকারি ভাষা হল অসমিয়া।