‘সবার উপরে মানুষ সত্য, তাহার উপর নাই।’ বিপরীতে এও বলা যায়, ‘সবার উপরে মানুষ মিথ্যা, তাহার উপর নাই।’ যে চিকিৎসক অবসরের পরও মানুষকে ভালবেসে যুক্ত রেখেছিলেন জনসেবার্থে, তাঁকেই কিনা পিটিয়ে মারল মানুষ!
অসমের যোরহাট জেলার টিয়ক চা -বাগানে ৭৩ বছর বয়স্ক প্রবীণতম চিকিৎসককে পাশবিক নির্যাতন করে হত্যার অভিযোগে ২১ জন শ্রমিককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। চা বাগান কর্তৃপক্ষ পুরো টি এস্টেট বন্ধ করে দিয়েছেন পরিস্থিতি সামাল দেবার জন্যে। এছাড়া মঙ্গলবার যোরহাট বনধের ডাক দিয়েছে ‘ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন’। সব ধরণের জরুরি পরিষেবা বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে তারা।
পুলিশ জানিয়েছে, এই ঘটনায় প্রায় ২৫০ জন জড়িত। তাঁদের প্রত্যেককে শনাক্ত করার কাজ অব্যাহত রাখা হয়েছে।
শনিবার দুপুরে টিয়ক চা বাগানের শ্রমিক ৩৩ বছর বয়সী সোমরা মাঝির মৃত্যুর পুরো দায় শ্রমিকরা নিহত ডঃ দেবেন দত্তের উপর বর্তায়।
অথচ টিয়ক হাসপাতালে সে সময় ছিলেন না দেবেন বাবু। ফার্মাসিস্টও ছুটিতে ছিলেন। কর্তব্যরত নার্স স্যালাইন দেয়েছিলেন কিন্তু তাঁর আয়ু শেষ হয়ে আসে।
এদিকে বিকেল সাড়ে তিনটে নাগাদ ডঃ দেবেন হাসপাতালে এলে উন্মাদ চা-বাগানের শ্রমিকরা বেধড়ক মেরে একটি কোঠায় বন্দী করে রাখে। সেখান থেকে পুলিশ এসে তাঁকে উদ্ধার করে। কিন্তু ততক্ষণে দেহে প্রাণ ছিল না ডঃ দেবেন দত্তের।
ওয়েস্ট বেঙ্গল ডক্টরস ফোরামের দেওয়া একটা বিবৃতিতে জানানো হয়, “অবসরের পরেও সেবামূলক কাজে নিজেকে যুক্ত রেখেছিলেন ডাক্তার দত্ত। যাদের তিনি পরিষেবা দিলেন, তারা পুলিশের সামনে তাঁকে মেরে তার পুরস্কার দিল। উন্মত্ত জনতার হাত থেকে গুরুতর আহত ডাক্তার দত্তকে বের করে আনতে প্যারামিলিটারির সাহায্য লেগেছিল। এটাই কি ভারতের ন্যায়বিচার। এটাই কি ভারতে চিকিৎসার সঙ্গে যুক্ত মানুষদের সুরক্ষা। ভারতের ডাক্তারদের কাজের সম্মান আর কেউ করে না।”