সমগ্র পৃথিবীর সাথে ভারতেও করোনা ভাইরাস নরসংহারী রূপ ধারণ করেছে।
দেশে করোনা প্রতিরোধের জন্যে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ঘোষণা করা লকডাউন অব্যাহত রয়েছে।
এই সংকট সময় গুয়াহাটি মা কামাখ্যা মন্দিরে চলতি বছরের অম্বুবাচি মেলা অনুষ্ঠিত না করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে।
উল্লেখ্য যে, অম্বুবাচী মেলা হচ্ছে, হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সবচাইতে বৃহৎ ধর্মীয় সমাবেশ। কামাখ্যা মন্দির অসমের গুয়াহাটির নীলাচল পাহাড়ে অবস্থিত।
দেশজুড়ে লকডাউন অব্যাহত থাকার সময় বুধবার মা কামাখ্য মন্দিরের কার্য সঞ্চালকদের মধ্যে অনুষ্ঠিত সভায় অম্বুবাচি মেলা বাতিল করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে। অবশ্য ধর্মীয় রীতি-নীতির মাধ্যমে পূজার কার্য সম্পন্ন করা হবে।
অম্বুবাচী হিন্দুধর্মের বাৎসরিক উৎসব। অম্বুবাচীকে বিভিন্ন আঞ্চলিক ভাষায় অমাবতি ও বলে। হিন্দুদের শাস্ত্রে পৃথিবীকে মা বলা হয়ে থাকে। বেদেও একই রকমই তাকে মা রূপে বর্ণনা করা হয়েছে, আবার পৌরানিক যুগেও পৃথিবীকে ধরিত্রী মাতা বলা সম্বোধন করা হয়েছে। আষাঢ মাসে মৃগ শিরা নক্ষত্রের তিনটি পদ শেষ হলে পৃথিবী বা ধরিত্রী মা ঋতুময়ী হয়। সেই সময়টিতে অম্বুবাচী পালন করা হয়। অর্থাৎ এই প্রচলিত আচারের পিছনে দেখা যাচ্ছে পৃথিবী আমাদের মা এই বিশ্বাস রয়েছে৷
তার কারণ পৃথিবীতেই তো মানুষের জন্ম ,শুধু মানুষ বলে নয় ফুল, পাখী ,প্রকৃতি এক কথায় সকলেই তো পৃথিবীর সন্তান। মহাজাগতিক ধারায় পৃথিবী যখন সূর্যের মিথুন রাশিস্থ আদ্রা নক্ষত্রে অবস্থান করে সেদিন থেকে বর্ষাকাল শুরু ধরা হয়। পাশাপাশি আমরা জানি মেয়েদের ঋতুকাল বা রজঃস্বলা হয় এবং একজন নারী তারপরই সন্তান ধারনে সক্ষম হয় ।ঠিক তেমনি প্রতিবছর অম্বুবাচীর এই তিনদিনকে পৃথিবীর ঋতুকাল হিসেবে ধরা হয়।
ধর্মীয় আচার হলেও এরসঙ্গে প্রাচীন কৃষি ব্যবস্থা জড়িয়ে থাকায় এটির একটি সামাজিক প্রভাবও রয়েছে। ফলে অম্বুবাচী’ একটি কৃষিভিত্তিক অনুষ্ঠানও। এর অর্থ ধরিত্রীর উর্বরাকাল।দেখা যায় এই তিন দিন জমিতে কোনও রকম চাষ করা হয় না যাতে বর্ষায় সিক্তা পৃথিবী নতুন বছরে নতুন ফসল উত্পাদনের উপযোগী হয়ে ওঠে। সেই ধ্যান ধারণা থেকেই আষাঢ় মাসের শুরুতে পৃথিবী বা মাতা বসুমতি যখন বর্ষার নতুন জলে সিক্ত হয়ে ওঠে তখন তাকে ঋতুমতি নারী রূপে গণ্য করা হয়৷
তখন শুরু হয় অম্বুবাচী প্রবৃত্তি ঠিক তিন দিন পরে সেটা শেষ হয়, সেটা হল অম্ববুচি নিবৃত্তি । প্রাচীন কাল থেকেই এই নিবৃত্তির পরই ফের জমিতে চাষ আবাদ করত কৃষকেরা।