এনআরসি আতঙ্কে দিশেহারা মানুষের রাতের ঘুম উবে গেছে, এরমধ্যে ভোটার কার্ড ভেরিফিকেশনের ইঁদুর দৌড় শুরু হয়েছে।
কাঠফাটা রোদে ভোটার কার্ড ভেরিফিকেশনের লাইনে মফঃস্বলীয় অঞ্চলের মানুষ গোটা পরিবার নিয়ে, ভোটার কার্ড ভেরিফিকেশনের তাগিদে।
যদিও নির্ধারিত তারিখ বর্ধিত করা হয়েছে, তবুও ভিড় কমছে না বিভিন্ন কম্পিউটার সেন্টারগুলিতে।
হাজার হাজার মানুষের এনআরসি আতঙ্ক শেষ হয়নি এখনও, এর উপর শুরু হয়েছে ইলেক্টর্স ভেরিফিকেশন প্রোগ্রাম।
তাতে যেন আরও বেশি করে চেপে বসেছে এনআরসি-র ভূত।
অন্যদিকে, এনআরসি আতঙ্ক তথা রাষ্ট্রহীন হওয়ার ভয় মানুষের সমস্ত আনন্দ কেড়ে নিয়েছে।
এমন বহু পরিবার রয়েছে,যে পরিবারে কারো বাবা তো কারো মা নাগরিক তালিকায় নাম অন্তর্ভুক্ত না হওয়ায় আত্মহত্যা করেছেন। এবং এমন হৃদয়বিদারক ঘটনা আকছার ঘটছে,ঘটেই চলেছে।
তাছাড়া গোঁদের উপর বিষফোড়ার মতো ডি ভোটার আতঙ্ক। ইদানিং আচমকাই বেড়ে গেছে বিদেশি নোটিস বিতরণের মাত্রা !
অনেক মানুষের ঘরে পৌঁছোচ্ছে সন্দেহভাজন বিদেশির নোটিশ ! অনেক জায়গায় প্রায় জোর করেই নোটিসগুলো সার্ভ করছে বর্ডার পুলিশ।
অবৈধ অনুপ্রবেশকারী হিসাবে ফরেনার্স ট্রাইব্যুনাল থেকে ইস্যু হওয়া ওইসব নোটিশ পেয়ে হতবাক হয়ে গেছেন ভুক্তভোগীরা।
জানা গেছে, যাঁদের নামে বিদেশি নোটিশ আসছে তাঁরা এর আগে কোন দিন এরকম নোটিশ পাননি। ফলে শেষ আশ্বিন মাসের ফাঁপরে উঠা রোদ মাথায় নিয়েই সকাল থেকে দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে ভোটার কার্ড ভেরিফিকেশনে পরিবারের মানুষ। কাজ শুরু করেছে নির্বাচন কমিশন। এখন ভোটার কার্ড বা সচিত্র পরিচয়পত্রে নাম, ঠিকানা সংশোধন করতে কাটিগড়া সহ আশপাশের এলাকার জনগনের নাওয়া-খাওয়া উবে গেছে।
সোমবার এখানকার ব্যস্ততম বাজার এলাকায় দেখা গেছে ডিজিটাল ভোটার আইডি কার্ড ভেরিফিকেশনের জন্য লাইন দিয়েছেন কয়েক হাজার মানুষ। নির্বাচক তথ্য যাচাইয়ের জন্যও ভিড় জমিয়েছেন অনেকে। কেউ কেউ গোটা পরিবার নিয়ে ভ্যান বা অটো রিজার্ভ করে চলে এসেছেন। একই চিত্র ধরা পড়েছে গ্রামীণ এলাকায় । বিশেষ করে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষ বেশি করে ভিড় করছেন ইভিপি বা ইলেক্টর্স ভেরিফিকেশন প্রোগ্রামের মাধ্যমে নিজেদের কার্ড ভেরিফিকেশন করতে। ভিড় বাড়ছে জেরক্সের দোকানগুলিতেও। তা নিয়ে শুরু হয়েছে কালোবাজারিও। যে যেমন পারছে মানুষ ঠকিয়ে ফায়দা লুটে নিচ্ছে।
কালাইনের জনৈক এক যুবকের অভিযোগ, ‘কি হচ্ছে বুঝতে পারছি না। কেউ বলছে ভোটার কার্ড আর আধার কার্ডই আসল। মোদী সরকারের রাজত্বে এ কেমন যন্ত্রণা সহ্য করতে হচ্ছে যা নিয়ে আক্ষেপের সুর ওই যুবকের।
আমিনা বেগম নামে গৃহবধূ বলেন, ‘একটা ভোটার কার্ড ভেরিফিকেশন করতে পঞ্চাশ টাকা করে নিচ্ছে আমাদের পাড়ায়। আমার পরিবারে ১১ জন সদস্য। ধুম করে কোথা থেকে এত টাকা পাব?’
এক কম্পিউটার দোকানি জানান , সকাল-বিকাল মানুষ পাগলের মত বাণ্ডিল বাণ্ডিল কাগজ নিয়ে দোকানে আসছেন ভোটার আইডি কার্ড ভেরিফিকেশন করতে । সকাল ৯টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত দোকান চালিয়েও সবাইকে পরিষেবা দিতে পারছেন না বলে জানান।