হাইলাকান্দিতে রবিবার রাতে এক সাংবাদিক পুলিশ কনস্টেবলের প্রতিশোধের শিকার হওয়ার মাত্র দু’দিনের মাথায় সামনে এলো আরেক জঘন্য কাণ্ড।
নির্যাতনের শিকার হওয়া সাংবাদিক রাজেশ দাসের বিরুদ্ধে হাইলাকান্দি সদর থানায় এক মিথ্যা মামলা দায়ের করলেন নির্যাতনকারী পুলিশ কনস্টেবল রাজেশ শুক্লবৈদ্য।
রবিবার রাতে সাংবাদিক রাজেশ দাস এই কনস্টেবলকে নিজ কাজে বাধা প্রদান করার অভিযোগ উত্থাপন করেছেন এই কনস্টেবল।
গত বছর এনআরসি ভেরিফিকেশনের নামে টাকা নিতে গিয়ে হাতে নাতে ধরা পরে সাসপেণ্ড হয়েছিলেন হাইলাকান্দির এক পুলিশ কনস্টেবল রাজেশ শুক্লবৈদ্য (বাবলু)। আর তাঁর এই মহৎ কর্মের সংবাদ পরিবেশন করার জন্যই গত রবিবার রাতে সুযোগ পেয়ে অমানুষিক ভাবে আক্রমণ করেন তাঁর বিরুদ্ধে সংবাদ পরিবেশন করা সেই সাংবাদিক রাজেশ দাসের উপর। এই বর্বর আক্রমণে গুরুতর ভাবে আহত হয়েছেন রাজেশ দাস। তাঁর বাদিকের কানের পর্দা ফেটে গিয়েছে। হয়তো একজীবনে আর এক কানে কালা হয়েই বাচতে হবে সাংবাদিক রাজেশ দাসকে।
এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে পরদিন থেকে উত্তাল হয়ে উঠেছে সমগ্র রাজ্য। রাজ্যের বিভিন্ন জেলা থেকে এই ঘটনার প্রতিবাদ এবং ধিক্কার জানিয়ে দোষি পুলিশ কনস্টেবলকে কঠোর শাস্তি প্রদানের দাবী উত্থাপন করা হচ্ছে।
হাইলাকান্দি পুলিশও ঘটনার গুরুত্ব বুঝে সোমবার সকালেই গ্রেফতার করে অভিযুক্ত কনস্টেবল রাজেশ শুক্লবৈদ্যকে। কিন্তু এতোসবের পরও অনুতাপের কোন লেশ মাত্র নেই জেলা সদরের একাদশ শহিদ স্মরণীর বাসিন্দা এই পুলিশ কর্মীর।
উল্টা সাংবাদিকের বিরুদ্ধে এক ভূয়া পাল্টা মামলা দাখিল করলেন সেই পুলিশ কর্মী।
সোমবার বিকেলে হাইলাকান্দি সদর থানায় ৭৬৬/১৯ নম্বরে ভারতীয় দণ্ড বিধির ২৯৪ এবং ৩৫৩ ধারায় এই মামলাটি দাখিল করেছেন কনস্টেবল রাজেশ শুক্লবৈদ্য।
এই মামলায় কনস্টেবল শুক্লবৈদ্য রাজেশ দাসকে অভিযুক্ত করে তাঁর বিরুদ্ধে গালিগালাজ করা এবং সরকারি কর্মীকে কাজে বাধা দেওয়ার অভিযোগ উত্থাপন করেছেন।
এখন প্রশ্ন উত্থাপন হচ্ছে কেনো এই মামলাকে ভূয়া মামলা বলা হচ্ছে? কারণ হল আইনকে হাতিয়ার বানিয়ে বর্তমানে বাঁচার চেষ্টা আরম্ভ করেছেন এই আইনের রক্ষক। যদি রাজেশ দাস তাকে রবিবার রাতে কাজে বাধা দিয়েছিলেন তাহলে তিনি তখনই রাজেশ দাসকে কেনো গ্রেফতার করলেন না? তাঁর সঙ্গে তো ৫/৬ জন সিআরপিএফ জোয়ান ও ছিলেন। তবুও তিনি রাজেশ দাসকে আটক করেন নি। এমনি কাজে বাধার শিকার হয়ে চুপ করে বসে রয়েছেন। তাঁকে যে জায়গায় ডিউটি দেওয়া হয়েছিল সেই স্থান থেকে হাইলাকান্দি সদর থানা মাত্র ১০০ মিটার দূরত্বে রয়েছে তারপরও কনস্টেবল শুক্লবৈদ্য এ বিষয়ে থানায় কোন খবর দেননি। কিন্তু যখন তাঁকে গ্রেফতার করা হলো তারপর হঠাৎ মনে পড়ল কাজে বাধা আর মামলা করার কথা।
সোমবার রাজেশ দাসের মামলায় সকালে আটক হয়ে বিকেলে মনে হল পাল্টা মামলা করার কথা। এ আইনের অপব্যবহার নয়তো আর কি? সবচেয়ে মজার কথা হলো সোমবার সকালে তিনি রাজেশ দাসের এক সহকর্মীকে ফোন করে রাজেশ দাসের সঙ্গে তাঁর দেখা হয়েছে বলেও অস্বীকার করেছিলেন।
আর তারপরই হঠাৎ করে মনে পড়ে কাজে বাধা দেওয়ার কথা। এ আইনের অপব্যবহার নয়তো আর কি? কিন্তু এসবের পরও দেশের বিচার ব্যবস্থার উপর সম্পূর্ণ আস্থা দেখিয়ে সাংবাদিক রাজেশ দাস জানিয়েছেন, আইন সবার উপরে। আইন তার কাজ ঠিক মতই করবে বলেও আশা প্রকাশ করেছেন রাজেশ দাস।