নাবালিকা ধর্ষণের দায়ে হাইলাকান্দিতে এক ব্যক্তির দশ বছরের কারাদণ্ড। চাঞ্চল্যকর এই মামলায় বুধবার অভিযুক্ত সাবুল মিয়া (সাবুল মুল্লা)-কে জেলা ও দায়রা আদালতের স্পেশাল পকসো ৩/২০১৮ নম্বরের মামলায় দোষী সাব্যস্ত করে ২০১২ সালের পকসো আইনের চার নম্বর ধারায় দশ বছরের সশ্রম কারাদণ্ডের পাশাপাশি দশ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে । জরিমানা অনাদায়ে আরও অতিরিক্ত ছয় মাস সশ্রম কারাদণ্ডের নির্দেশ দিয়ে মামলার চূড়ান্ত রায়দান করেন হাইলাকান্দির জেলা ও দায়রা আদালতের বিচারপতি দেবাশিষ ভট্টাচার্য ।
পাশাপাশি ওই রায়ে ধর্ষণের শিকার নাবালিকাকে ভিক্টিম কমপেনসেশন স্কিমের মাধ্যমে ক্ষতিপূরণের বিষয়টি খতিয়ে দেখতে জেলা আইনি সহায়তা কেন্দ্রের কাছে সুপারিশ করেছেন দায়রা বিচারপতি ভট্টাচার্য ।
২০১৮ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি সংঘটিত হয়েছিল এই ঘটনা। করিমগঞ্জ জেলার রাতাবাড়ি থানাধীন একটি গ্রামের বাসিন্দা তথা ধর্ষিতার পিতার দায়ের করা মামলার অভিযোগ মতে ওইদিন তিনি বছর তেরোর কন্যাসন্তানকে সঙ্গে নিয়ে তার অসুস্থ স্ত্রীর চিকিৎসা (ঝাঁড়ফুক) করাতে গিয়েছিলেন হাইলাকান্দির কালাছড়া অঞ্চলের গোবিল গ্রামের সাবুল মিয়া ( সাবুল মুল্লার) বাড়িতে । সেখানে যাওয়ার পর স্ত্রীর চিকিৎসা শেষে তার মেয়েকে ঝাড়ফুঁকের কক্ষে নিয়ে যান সাবুল মুল্লা । ওই কক্ষে নিয়ে গিয়ে খুন করার হুমকি দিয়ে বলপূর্বক তাঁর নাবালিকা মেয়ের সঙ্গে শারীরিক সম্পর্কে লিপ্ত হয় সাবুল মিয়া বলে অভিযোগ করেন মামলাকারী।
সেদিন ধর্ষণের পর কন্যা সন্তান ভয়ে যথাস্থানে কিছু না বলায় সরল মনে সাবুল মুল্লার দেওয়া তাবিজ-বটি সংগ্রহ করে তিনি স্ত্রী-কন্যাকে নিয়ে এদিনই বাড়িতে চলে যান । কিন্তু বাড়িতে যাওয়ার পর মেয়েটি তার সঙ্গে যেসব কুকর্ম করেছে সাবুল মুল্লা সেবিষয়টি তার মা-র কাছে খুলে বলে ।
ব্যাপারটি জানার পর স্বামীর কাছে বিষয়টি অবগত করেন স্ত্রী । ঘটনার ব্যাপারে জানার পর কালবিলম্ব না করে তিনি তার কন্যা ধর্ষণের সব বিষয় তুলে ধরে পরদিন অর্থাৎ ২০ ফেব্রুয়ারি সাবুল মিয়াকে অভিযুক্ত করে হাইলাকান্দির লালা থানায় এক মামলা দায়ের করেন ।
পুলিশ মামলাটি ৪১৭/৫০৬ আইপিসি সহ পকসো আইনের চার নম্বর ধারায় ৫২/১৮ নম্বরে নথিভুক্ত করে । এবং তদন্তে নেমে পুলিশ ২৭ ফেব্রুয়ারি অভিযুক্তকে গ্রেফতার করে হাইলাকান্দির সিজেএম আদালতে হাজির করলে সেখানে জি আর ৩১৫/১৮ নম্বরে মামলা নথিভুক্ত করে সিজেএম আদালতের বিচারপতি অভিযুক্তকে জেল হাজতে পাঠিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দেন ।
পরবর্তীতে ২০১৮ সালের ৫ মার্চ মামলাটি কমিট হয়ে আসে জেলা ও দায়রা বিচারপতির স্পেশাল আদালতে । সেখানে মামলাটি ৫০৬ আইপিসি এবং পকসো আইনের চার নম্বর ধারায় ৩/২০১৮ নম্বরে নথিভুক্ত হয়। পুলিশ মামলার চার্জশিট ৩০ এপ্রিল দাখিল করার পর শুরু হয় বিচারপ্রক্রিয়া ।
এতে মামলায় ধর্ষিতার পক্ষে সাতজন এবং অভিযুক্তের পক্ষে তিনজনের সাক্ষ্য গ্রহণ করে আদালত । দুই পক্ষের যাবতীয় বিষয়াদি খতিয়ে দেখে অভিযুক্ত সাবুল মিয়াকে মামলায় দোষী সাব্যস্ত করে ২০১২ সালের পকসো আইনের চার নম্বর ধারায় এদিন মামলার চূড়ান্ত রায়দান করেন হাইলাকান্দির জেলা ও দায়রা বিচারপতি দেবাশিষ ভট্টাচার্য ।
এদিন রায়দানের পর আদালত চত্বরে এনিয়ে ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয় । মামলায় সরকার পক্ষে আইনজীবী ছিলেন উজ্জ্বলকুমার দাস ও অভিযুক্তের পক্ষে সাওয়াল করেন আইনজীবী রাজিব আহমদ লস্কর ।